বিজ্ঞান যুগ : ভুল করলেই খেসারত অনিবার্য

 

অস্ত্রের নাম সেলফোন তথা মোবাইলফোন। মোবাইলফোন যোগাযোগ স্থাপনে বিপ্লবই ঘটায়নি, এ প্রযুক্তির বহুমাত্রিক অপব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। যেমন চাঁদাবাজিতে, তেমনই প্রতারণায় ব্যবহৃত হচ্ছে দেদারছে। মোবাইলফোনের কারণে অপ্রাপ্ত বয়সী কিশোর-কিশোরীরাও বিপথগামী হচ্ছে। দ্রুত যেমন ছড়াচ্ছে নীলছবি, তেমনই তারা এ যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের নায়ক-নায়িকার আসনে বসিয়ে হারাচ্ছে উজ্জ্বল ভবিষ্যত। এ থেকে প্রতিকারের উপায় কী? মোবাইলফোনে মিসকল দিয়ে পরিচয়। এরপর শুরু হচ্ছে প্রেমালাপ। সুঁড়সুঁড়ি দিয়ে দেহদানের লোভ দেখিয়ে পুরুষ ডেকে নিয়ে বন্দি করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ের যেমন উদাহরণ দিন দিন বাড়ছে, তেমনই মোবাইলফোনে বিয়ের প্রতিশ্রুতি পেয়ে ঘর ছেড়ে পথে পথে ঘুরে সম্ভ্রম হারানো কিশোরীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় মোবাইলফোনে প্রেমে পড়ে ফরিদপুর এলাকার এক কিশোরীর প্রতারিত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবক নিজেকে জুয়েল বলে পরিচয় দিয়ে জানায় তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার ভালাইপুর-গোকুলখালী এলাকায়। বিয়ের প্রতিশ্রুতি পেয়ে কিশোরী ঘর ছেড়ে ভালাইপুর-গোকুলখালী এলাকায় তিনদিন ধরে ঘুরে হয়রান হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়।

যুবতীর বোকামিতে কেউ হেসেছে, কেউ কেউ যুবতীর সরলতায় সহানুভূতিও জানিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত জুয়েলকে খুঁজে না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে। কিশোরীর কান্না দেখে মায়া জাগার বদলে তাকে বিরূপ মন্তব্যই শুনতে হয়েছে। না জেনে, না বুঝে মোবাইলফোনে কথার ওপর ভিত্তি করে ঘরছাড়া শুধু নির্বুদ্ধিতাই নয়, বোকামি। শুধু কি অপরিচিত যুবক-যুবতীদের মধ্যেই এরকম সম্পর্ক গড়ে উঠছে? তা নয়, পরিচিতদের মধ্যেও অপ্রাপ্ত বয়সেই প্রেমসম্পর্ক গড়ে তোলাকে সহজতর করে তুলছে এ প্রযুক্তি। জীবন সম্পর্কে বুঝে ওঠার আগেই ওরা ঘর ছেড়ে অনিশ্চয়তার অথই সাগরে পড়ছে। পরকীয়া বেড়ে যাওয়ার জন্যও মোবাইলফোন কম দায়ী নয়। আর চাঁদাবাজি? সে তো হচ্ছেই। কৌশলে গোপনে বোমা বা বোমা সাদৃশ্য বস্তু বাড়ির দরজায় রেখে মোবাইলফোনে খুনের হুমকি দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। এছাড়া মোবাইলফোনে জিনের বাদশা সেজে রাতারাতি সোনা-দানার মালিক বানিয়ে দেয়ার কথা বলেও প্রতারণা করা হচ্ছে। সন্তানের অপঘাতে মৃত্যু হবে বলেও ভবিষ্যত বাণী করে মোবাইলফোনে প্রতারক জিনের বাদশা হাতিয়ে নিচ্ছে নজরানা। সরলসোজা অনেকেই এ ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছে। প্রতিকার মিলছে না।

প্রতারক থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন সতর্কতা। কেননা, প্রতারকদের মূল অস্ত্র লোভের ফাঁদ। লোভে পড়লেই সর্বনাশ। জিনের বাদশা সেজে যারা প্রতারণা করে তারা সরলসোজা মানুষগুলোকে বোকা বানায়। সচেতন হলে এ ধরনের ধোকা দিতে পারে না। কিশোর-কিশোরীদের হাতে মোবাইলফোনের মতো যোগাযোগ মাধ্যম তুলে দেয়া অভিভাবকদের অসচেতনতারই বহির্প্রকাশ। দায়িত্বশীল অভিভাবকেরা অপ্রাপ্ত বয়সের ছেলে-মেয়েদের হাতে মোবাইলফোন দেন না। চাঁদাবাজি রুখতে অবশ্যই মোবাইলফোনের অবস্থান শনাক্ত করা প্রযুক্তির ব্যবহার প্রয়োজন। এজন্য পুলিশকেই দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। তার আগে যার কাছে মোবাইলফোনে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে তাকেও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। কখন কতো নম্বর মোবাইলফোন থেকে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে তা আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের না জানালে প্রতিকার মিলবে কীভাবে? নিজেকে রক্ষার জন্য গোপনে চাঁদা দেয়া মানে চাঁদাবাজচক্রকে উৎসাহিত করা। সম্মিলিতভাবেই চাঁদাবাজ রুখতে হবে। পুলিশকে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। মোবাইলফোনে অপরিচিত কারো সাথে প্রেমালাপ বা তার আহ্বানে সাড়া দেয়া মানেই অন্ধকারে অতল গহ্বরে লাফ দেয়া। মনে রাখা দরকার, বিজ্ঞান যুগে সামান্য ভুল করলেই বড় ধরনের খেসারত অনিবার্য।