বাংলাদেশ ব্যাংক কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

 

ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। ফিলিপাইনের একটি পত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরই বিষয়টি জানাজানি হয়েছিলো। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রিজার্ভ থেকে অর্থ খোয়া যাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। মূলত সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি এ তথ্য জানায়। উল্লেখ্য যে, সাবেক এই গভর্নর সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

যখন রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তখন তা সহজ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যারা দেশের সম্পদ চুরির সাথে জড়িত থাকতে পারে তাদের প্রতি কোনো অনুকম্পা প্রদর্শনও গ্রহণযোগ্য নয়। সঙ্গত কারণেই প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এমনটি কাম্য। আর যখন জানা যাচ্ছে, প্রতিবেদনটি অন্তর্বর্র্র্তীকালীন প্রতিবেদন থেকে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ৯০ শতাংশ পরিবর্তন এসেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেছেন, এর নেপথ্যে কারা দায়ী, বাইরের কারা জড়িত, দেশের কারা জড়িত। কতোটা অর্থ আদায় করা সম্ভব, তারও একটা চিত্র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তখন তা আশাব্যঞ্জক বলেই আমরা বিবেচনা করি। ফলে এর পরিপ্রেক্ষিতে যতো দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা হবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য করা প্রয়োজন, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা তদন্তে ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে ১৫ মার্চ তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। কমিটিকে এক মাসের মধ্যে অন্তর্বর্র্র্তীকালীন এবং ৭৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিলো। আর কমিটির কর্মপরিধির মধ্যে ছিলো : বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে এ অর্থ কীভাবে ও কার বরাবর গেলো, অবৈধ পরিশোধ ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কী পদক্ষেপ নিয়েছে, বিষয়টি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন রাখার যৌক্তিকতা কী, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ছিলো কি-না, অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা কতোটুকু, একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে করণীয় কী ইত্যাদি। স্বাভাবিকভাবেই এখন যখন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়া হলো, তখন এ বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে কোনো প্রকার ছাড় দেবে না এমনটি জরুরি। কেননা মনে রাখতে হবে, প্রতিবেদনেই রিজার্ভ চুরির সাথে জড়িত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছয়জনের নাম উঠে এসেছে। এর ভয়াবহতা কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। যখন এই চুরির সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও কেউ জড়িত থাকতে পারে তখন তা ভবিষ্যতের জন্যও আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে নির্দেশ করে। ফলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যাথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। রিজার্ভ চুরির ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলেও যেমন আলোড়ন তুলেছে, তেমন এ ঘটনাটির অনৈতিক দিকটিও নিন্দিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। এখন যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও ছয়জনের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসছে তখন তা অত্যন্ত দুঃখজনক। একই সাথে এও আমলে নিতে হবে, বিভিন্ন সময়েই দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হওয়ার বিষয়টি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া এটিএম বুথ থেকেও অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে; যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকেই স্পষ্ট করে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্যগুলোকে আমলে নিয়ে সরকারের কর্তব্য হওয়া দরকার সুষ্ঠুভাবে পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। এছাড়া ক্ষতিপূরণ আদায়ে কূটনৈতিক ও অন্য তৎপরতা চালাতে হবে। এর পাশাপাশি পুরো বিষয়টি সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করতে সার্বিক প্রচেষ্টাও জারি রাখা আবশ্যক।