বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

আজ ১০ জানুয়ারি। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অত্যন্ত গুরুত্ববহ দিন। ১৯৭২ সালের এদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব জনমতের চাপে এবং বাংলার লাখো কোটি মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে তার প্রাণপ্রিয় বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছিলেন। ১৯৭০’র ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের রায় অগ্রাহ্য করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন বাংলার জনগণের ওপর নানা মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং একাত্তরের মার্চে সারা পাকিস্তানের বৃহৎ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্দী করে নিয়ে যায়, তখনই পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভাগ্যাকাশ থেকে পূর্ব পাকিস্তান নামক অংশটি খসে পড়ার পাকাপোক্ত বন্দোবস্ত সম্পন্ন হয়। এদেশে পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পাকিস্তানকে অখণ্ড রাখার এক অলীক স্বপ্নে সেদিন বিভোর ছিলো পাকিস্তানি শাসকেরা। ১৯৪৭ এ পাকিস্তান রাষ্ট্রটি অর্জিত হওয়ার পর থেকে পূর্বাঞ্চলের বাঙালিদের ওপর যে বৈষম্য, দমননীতি, অবিচার চাপিয়ে দেয়া হয় তার বিরুদ্ধে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মোহনায় এসে পাকিস্তানি শাসকবর্গের অবিমৃষ্যকারিতায় তা সশস্ত্র রূপ ধারণ করে। নির্যাতন নিপীড়ন আর গণহত্যা চালিয়ে বাংলার মানুষকে স্তব্ধ করে দেয়ার সকল হীন কৌশল সেদিন ব্যর্থতার বালুচরে মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলার গণমানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে। আর সেই প্রতিরোধের মূল শক্তি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ বেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মনে প্রত্যয়ের যে বীজ বপন করেন তা আমাদের ইতিহাসের মহাবিস্ময়কর ব্যাপারই বটে! বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য-ভাষা-সংস্কৃতির ওপর নেমে আসা মহাদুর্যোগ কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু সেদিন অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। সাড়ে সাত কোটি প্রত্যয়-দৃঢ় বাঙালি সেদিন মুক্তি ও স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে।

দশই জানুয়ারি তাই প্রতিবছর ক্যালেন্ডারের পাতায় যেমন ফিরে আসে ঠিক তেমনি সকলের অলক্ষ্যে, অদৃশ্যে বার বার এ দিনটিতে এদেশের জনগণের কাছে ফিরে আসেন সেই মহান পুরুষ, সেই সিংহ-হৃদয় মুজিব। বাংলার দুর্যোগে-দুর্ঘটনায়-দুর্ভাবনায় মুজিবই আমাদের শক্তি আমাদের প্রেরণা আমাদের আত্মার পরমাত্মীয়।