ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ সফল হোক

খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, মেধার বিকাশ, অক্সিজেন ও মূল্যবান কাঠ সরবরাহ, দারিদ্র্য বিমোচন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা- সকল ক্ষেত্রেই ফল ও ফলদ বৃক্ষের গুরুত্ব বর্ণনার চেয়ে বহু বেশি। ‘দিন বদলের বাংলাদেশ, ফল বৃক্ষে ভরবো দেশ’ এ প্রতিপাদ্য সামনে নিয়ে ইতোমধ্যে সারাদেশে শুরু হয়েছে ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী।

পরিবর্তিত জলবায়ুকে বিবেচনায় নিয়ে এলাকায় উপযোগী স্বল্পমেয়াদি, অধিক ফলনশীল ও লাগসই দেশীয় ফলের জাত উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ এখন সর্বস্তর থেকেই উঠে আসছে। বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে বৃক্ষের ঘনত্ব তুলনামূলক কম, অধিক হারে এবং নিয়মিত ওইসব অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। উত্তরবঙ্গের যমুনা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের দু তীরে, স্থায়ী চরাঞ্চল, বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তরে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, সৈয়দপুর প্রভৃতি এলাকায় গাছপালা নিতান্তই কম। এসব জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে, নদীর পাড়ে, চরাঞ্চলে প্রখর রোদে খাঁ খাঁ করে। প্রচণ্ড তাপে লোকজন অচল হয়ে পড়ে। বর্ষায়, অতিবৃষ্টিতে, বন্যায়, গাছ না থাকার কারণে অতি সহজে বিনা বাধায় ঘর-বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে যায়। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশের উপকূলবর্তী দক্ষিণাঞ্চলে বৃক্ষায়নের বিবিধ প্রকল্প ও উদ্যোগ থাকলেও তা এখন পর্যন্ত যথেষ্ট নয়। আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করতে নিয়মিতভাবে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপণ প্রয়োজন। এতে জলোচ্ছ্বাস, ঝড়, বৃষ্টি, আইলা, সুনামি ইত্যাদি থেকে মানুষ বাঁচতে পারবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। ফসলহানিও কমবে। তা ছাড়া দরিদ্র এলাকায় বিনামূল্যে বৃক্ষ সরবরাহও ইতিবাচক সাড়া মিলবে।

গাছ হলো ধরিত্রীর আত্মরূপতুল্য, জগতের সকল গরল গলাধকরণ করে নিজেকে নীলকণ্ঠ করে, রক্ষা করে মানব সভ্যতা-সমেত তাবত জীবজগৎ। বৃক্ষরাজির ব্যাপারে আমাদের দায়িত্ববোধ বেড়েছে বটে। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে গাছের ভূমিকা নেই। বিশ্বের জলবায়ুর পরিবর্তন পরিক্রমায় গাছই পারে পরিবেশকে পুনরায় স্বাভাবিক করতে। সুতরাং ফলদ বৃক্ষরোপণ পক্ষ সফল হোক। গাছ লাগানোর তাগিদ থাকুক সারাবছর।