প্রসঙ্গ চুয়াডাঙ্গার সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাদান কেন্দ্র

চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্লিনিকমালিক সমিতি শুধু বাণিজ্য নয়, সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি দরিদ্র অসহায় রোগীদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। কিন্তু জেলার ক্লিনিকগুলোর সবক’টি কি বিধি সম্মতভাবে পরিচালিত হচ্ছে? প্রশ্নটি সঙ্গত। ক্লিনিকে যখনই স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়, তখনই লক্ষ্য করা যায়, কিছু ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং ডিপ্লোমা সনদধারী সেবিকা ও রেজিস্টার্ড চিকিৎসক না থাকার কারণে জরিমানা করা হয়। এসব না থাকলে স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত হবে কীভাবে? অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার ছাত্রসমাজ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ কিছু অনিয়ম দূর করার দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করেছে। দাবি-দাওয়াগুলো অযৌক্তিক নয় হেতু স্বাস্থ্য বিভাগের গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই কাম্য।

 

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীকে ফুঁসলিয়ে কৌশলে ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসার নামে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ নতুন নয়। মাঝে মাঝেই অপচিকিৎসার অভিযোগও উত্থাপন হয়। চুয়াডাঙ্গার ক্লিনিকমালিক সমিতি এদিকে বিশেষ নজর দিয়ে সকল অনিয়ম দূর করে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করলে শুধু প্রশংসিতই হবে না, সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার মধ্যদিয়ে আস্থা অর্জন করতে পারলে সুপ্ত উদ্দেশ্যও হাসিল হবে। আর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বহিরাগত মাদকাসক্ত, ছিচকে চোরের উৎপাত বন্ধে পুলিশের সহযোগিতা যেমন প্রয়োজন, তেমনই সংশ্লিষ্টদের আশু আন্তরিক দৃষ্টিও দরকার। দালাল চক্রের অপতৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্যই সকল ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠানের কর্তারা দালাল নিযুক্ত করতে চান না। একজন যদি বাড়তি আয় করে, অপরজন তখন তাতে উদ্বুদ্ধ হয়। ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরাও নিজেরা সম্মিলিত উদ্যোগ নিয়ে দালাল নিয়োগের পথ পরিহার করতে পারেন। গ্রামবাংলা থেকে চিকিৎসা নেয়ার জন্য সরলসোজা মানুষ হাসপতালে আসেন, সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টিকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া দরকার। ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে চিকিৎসকের সাক্ষাত আধুনিক চিকিৎসা সম্প্রসারণে সহায়ক। অবশ্যই প্রতিনিধিরা তাদের ওষুধ সম্পর্কে চিকিৎসককে অবহিত করবেন, চিকিৎসকও নতুন নতুন ওষুধ সম্পর্কে জানার পর রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে তা লিখবেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্রতিনিধিদের কারো কারো বিশেষ উপঢৌকনে যখন কোনো কোনো চিকিৎসক পক্ষপাত হয়ে পড়েন, তখন তার প্রভাব পড়ে রোগীর ও অন্য ওষুধ কোম্পানির ওপর। সে কারণে দীর্ঘদিন ধরেই কোম্পানির দেয়া নামের ওষুধ না লিখে জেনেটিক নাম লিখলে রোগীরা ফার্মেসি তথা ওষুধের দোকানে গিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী মূল্য পরিশোধে ওষুধ কিনতে পারেন। অবশ্য এতে নিম্নমানের ওষুধের আধিপত্য বিস্তার হতে পারে। যদি মান নির্ণয়ের জন্য নিযুক্ত বিভাগীয় কর্মকর্তারা আন্তরিক হন তা হলে এ সমস্যা থেকেও পরিত্রাণ সম্ভব।

 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। কিছু চিকিৎসক আছেন যারা সেবার মানসিকতা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সেবাদানে আন্তরিকতা দেখান, কিছু আছেন যাদের আসা এবং যাওয়া থেকে শুরু করে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কারো কারো সাথে খোশগল্প নিয়ে মেতে উঠতেও দেখা যায়। একজনের জন্য দশ জনের শুধু দুর্নামই হয় না, অনেকেই সেবাদানের আন্তরিকতাও হারান। ফলে তদারক কর্তাদের এদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। হাসপাতালে যেহেতু দালালচক্র আর চোরের উৎপাত বেড়েছে সেহেতু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে রোগী সাধারণের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ক্লিনিক নার্সিং হোম বা বেসরকারি হাসপাতালের দালালদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি কোনো চিকিৎসকের সাথে কোনো ডায়াগনস্টিক বা ক্লিনিকের সাথে বিশেষ কমিশনের সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো উদ্যোগও প্রয়োজন।