প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহামারীতে ভুগছে গোটা জাতি

প্রশ্নপত্র ফাঁসের রহস্য বা কারণ উদ্ঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটি পরীক্ষার্থীদের উদ্বেগে না থাকার পরামর্শ দিয়েছে। তদন্ত কমিটি আগামী দুই-একদিনের মধ্যে সরকারের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও জমা দেবে, যা গণমাধ্যমে এসেছে। দেশে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সামগ্রিক চিত্র কোনোভাবেই স্বস্তিকর হতে পারে না। একের পর এক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় উদ্বেগ উrকণ্ঠা বাড়ছেই। পাশাপাশি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্যদিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে এমন এক অধ্যায়কে সামনে টেনে আনছে, যার প্রভাব অত্যন্ত ভয়ানক হবে বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কাও অযৌক্তিক নয়। জাতি বিধ্বংসী এ প্রবণতা রোধে কঠোর হওয়ার বিকল্পও থাকা উচিত নয়।

বলাই বাহুল্য, বর্তমানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহামারীতে ভুগছে গোটা জাতি। কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না এই অসুস্থ প্রবণতা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের হুঁশিয়ারি, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রকে গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি- কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। ধারাবাহিকভাবে ফাঁস হয়ে চলেছে প্রশ্নপত্র। দেশে কয়েক বছর ধরে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হচ্ছিলো। সম্প্রতি প্রশ্ন ফাঁসের ভয়াবহতার ভেতর সরকার বলছে, পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিক্ষকরা প্রশ্ন ফাঁস করে দিচ্ছেন। সরকারের দায়িত্বশীলদের এমন বক্তব্যের ভেতর দিয়ে শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এক ধরনের বিরোধ সৃষ্টি হওয়াও অমূলক নয়। সবচেয়ে বড় কথা প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা জাতিকে কলঙ্কিত করছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যেও।

নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা গভীর এক সংকটকে স্পষ্ট করে। সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের কঠোরতা সত্ত্বেও ধারাবাহিক প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার দায় সংশ্লিষ্টরা অস্বীকার করতে পারে না বলেও ইতোমধ্যে আলোচনা উঠেছে। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার পর সংশ্লিষ্টদের অস্বীকার করার প্রবণতা,ফাঁসকারীদের আরও উৎসাহিত করছে- এমন ধারণাও অযৌক্তিক হতে পারে না। সম্প্রতি মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের বৈঠকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ৬ কারণ চিহ্নিত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছিলো। তদন্ত কমিটি তাদের সুপারিশসহ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেবে। যে কোনো কারণেই হোক না কেন, যদি শিক্ষাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। আর তা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়।

প্রশ্ন ফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল হবে, সরকার এমন ঘোষণা দিলেও তদন্ত কমিটি পরীক্ষা বাতিলের ব্যাপার কোনো কিছু জানাতে পারেনি। তবে কমিটি যে সুপারিশ করবে তা অত্যন্ত গোপনীয়। দেশের ২০ লাখ শিক্ষার্থীর স্বার্থের কথা চিন্তা করেই তদন্ত কমিটি তাদের সুপারিশ দাখিল করবে বলে জানা যায়। এবছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা এবং তদন্ত কমিটির কাজ শুরুর মধ্যেও প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। আর এ কারণে গোটা জাতির উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়া দরকার। তদন্ত কমিটির সচিবের তথ্য মতে, কোনো বিষয়ের রচনামূলক প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, কিছু কিছু এমসিকিউ অংশ মিলেছে। ১২টা পরীক্ষার জন্য ১২ রকমের ডিসিশন হতে পারে। পরীক্ষার্থী যেন কোনো উদ্বেগে না থাকে, তাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে, তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমরা সুপারিশ করবো।

সর্বোপরি বলতে চাই, প্রশ্ন ফাঁসসংক্রান্ত সামগ্রিক চিত্রে শিক্ষার্থী-অভিভাবক কেউই স্বস্তিতে নেই। সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়া দরকার-প্রশ্ন ফাঁস হলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্তু হওয়ার বিষয়টি। অন্যদিকে এ পরিস্থিতি রোধ না হলে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে, যা জাতিগঠনের ক্ষেত্রে হবে নেতিবাচক। ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি এমন সুপারিশ দাখিল করবে যাতে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীর উদ্বেগের অবসান ঘটে, তেমনইভাবে প্রশ্ন ফাঁস রোধে তা কার্যকর ভূমিকা রাখে। সরকারের কাছেও প্রত্যাশা থাকবে, তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো যথাযথ বিশ্লেষণ সাপেক্ষে এমন উদ্যোগ নিন, যাতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। জাতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের স্থায়ী অবসানই আশা করে।