পোলিওতে সাফল্য আছে, কিন্তু ভয় যায়নি

                পোলিও নির্মূলে আমরা বড় ধরনের সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। আগামী ২৭ মার্চ বাংলাদেশ পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষিত হতে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাউথ ইস্ট এশিয়া রিজিওনাল অফিস-সিয়েরো বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সনদ প্রদানের কথা জানিয়েছে। বেশ স্বস্তির কথা বটে। কিন্তু এ সাফল্যই শেষ কথা নয়, বরং বলা যায় পোলিও নির্মূলে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ আরও বাড়লো। অন্যথায় পোলিওর ভবিষ্যত-বিপদ পিছু ছাড়বে না। কেননা, বিশ্বের অনেক দেশেই পোলিও আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বছরের পর বছর শূন্য থাকার পরও ফিরে এসেছে এ রোগ। বাংলাদেশে ২০০৬ সালের পর থেকে আর কোনো পোলিও আক্রান্ত শিশু পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের রাজ্যগুলোও বেশ কিছু বছর ধরে পোলিওমুক্ত।

পোলিও রোগটি এমন একটি ভাইরাস থেকে হয়, যা খুব সহজেই মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে। সাধারণ খাবার এবং পানি থেকেই এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। বলা যায়, পোলিও জীবাণু ওত পেতে থাকতে পারে নানা ছদ্মবেশে। তার আলামত বোধকরি আমরা ইতোমধ্যেই পেতে শুরু করেছি। পোলিওমুক্ত আমেরিকায় নতুন করে রোগটি অন্যরূপে দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকান একাডেমী অব নিউরোলজির এক সম্মেলনের তথ্যানুযায়ী পোলিও ধাঁচের নতুন রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছে অনেকে। ভয়ের কথা হলো, চিকিত্সায়ও তাদের কোনো উন্নতি ঘটেনি। আরও ভয়ের কথা হলো, এসব শিশু পোলিও টিকা নিয়েছিলো। উদ্বেগের সংবাদ আরও রয়েছে। গত বছর সেপ্টেম্বরে ইসরাইল প্রাত্যহিক পয়ঃনিষ্কাশন পরীক্ষার সময় বহুদিন পর সেখানে তারা পোলিও ভাইরাসের সন্ধান পায়। অন্যদিকে সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে পোলিওর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সিরিয়ার লাখো শরণার্থী যেখানে গাদাগাদি করে বসবাস করছে, সেখানে এটি ছড়িয়ে পড়াটা খুবই স্বাভাবিক। সে কারণেই ১৪ বছরের মধ্যে প্রথমবার গত বছর সিরিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলে বেশ কিছু শিশু পোলিও আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্বখ্যাত ল্যানসেট মেডিকেল জার্নাল জানাচ্ছে, কেবল সিরীয় শরণার্থীদের পোলিওর ভাইরাস দিলেই এর সংক্রমণ রোধ হবে না। মধ্যপ্রাচ্যে পোলিও ঠেকানো সম্ভবপর না হলে ইউরোপেও তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আর আমাদের দেশে গত বছও কিছু কিছু অঞ্চলে টিকাদান কর্মসূচির সফলতা ঝুঁকির মুখে পড়োছিলো। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় পোলিওসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক গ্রহণের হার হ্রাস পাওয়ার কথা আমাদের অজানা নয়। এ হাওর অঞ্চলে টিকাদানের হার প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গিয়েছিলো। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে শিশুদের টিকাদানে এলে অভিভাবকেরাই তাদের বাধা দিয়েছেন। অভিভাবকেরা গত বছর মার্চের ভিটামিন এ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ওষুধের কারণে অসুস্থতা ও মৃত্যুগুজবের পরিপ্রেক্ষিতে বলছেন, ‘টিকা নিয়ে পুলাপান মারা গেছে। এর লাগি আমার পুলারে টিকা দেই না।’ অথচ গত বছর মার্চের আগে ওইসব অঞ্চলে পোলিওসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক গ্রহণের হার ছিলো শতভাগ। বিপরীতে বর্তমানে টিকা গ্রহণের হার ২০ বছর আগের অবস্থায় চলে গিয়েছিলো। এ ধরনের সমস্যা যে সকল অঞ্চলে রয়েছে, সে সকল এলাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে টিকা কর্মসূচি পরিচালনায়। সুতরাং আমরা আপাতত পোলিও মুক্তির স্বীকৃতি পেলেও এ ভাইরাসটি আমাদের শিয়রে সমনের মতো লেগে থাকবে সবসময়। সে কারণে তাতে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়ারও সুযোগ নেই।