পুলিশের দায়িত্ব আইনবদ্ধ ও পেশাদারত্বই কাম্য

ঝিনাইদহে মিছিলকারীদের সাথে সংঘর্ষে পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। মেহেরপুরের প্রাণ হারিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরকর্মী। পড়শি জেলাগুলোতে যখন এসব অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিলো তখন চুয়াডাঙ্গা ছিলো শান্ত। খানেকটা হঠাত করেই চুয়াডাঙ্গার দর্শনা অশান্ত হয়ে উঠেছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মিছিলকারীদের একজন নিহত হয়েছে। ঘটনার পর তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় অধাবেলা হরতাল। আজ বিক্ষোভ।

 

দর্শনায় বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সামান্য ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যখন তারা ফিরতে শুরু করে তখনই পেছন থেকে গুলি এসে লাগে এক যুবকের মাথার পেছনে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যায়। নিহত ছাত্রশিবিরকর্মী চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র ছিলো। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, মিছিলকারীরা যখন পূজামণ্ডপে হামলা চালানোর জন্য ছোটে তখন পুলিশ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের তরফে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থল আর পূজামণ্ডপের দূরত্ব অনেক। পূজামণ্ডপে হামলার প্রশ্নই ওঠে না। স্থানীয়দের অনেকেরই অভিমত, পুলিশ প্রাণহানির মতো ঘটনা সহজেই এড়াতে পারতো। তাহলে কেন খুনের মতো ঘটনা? রক্ত কি অনিবার্য ছিলো? কার জন্য, কোনো রাজনৈতিক দলকে খুশি করার জন্য? পুলিশের শক্তি প্রয়োগ ন্যায়পক্ষেই তো প্রত্যাশিত।

 

ঘটনার পর পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা যা দেখেছে তার বর্ণনা দেয়। মামলা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর তরফে তদন্ত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রকৃত সত্য রাজনীতির ডামাডোলের আড়ালেই পড়ে যায়। ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে কারা কীভাবে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে তা নিয়ে আলোচনাও রাজনৈতিক। তাদের যখন রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে সেহেতু তারা তাদের কেন্দ্রীয় নেতার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিল করতেই পারে। তাতে যদি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। তাই বলে গুলি করে খুন? অভিযোগ খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। মিথ্যার আবরণে চরম সত্যকে আড়াল করার অপর নাম অন্যায়চার। যার স্থায়িত্ব কখনোই থাকেনি, থাকে না। পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণ জাতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না।

 

গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্রশিবিরের একজন কর্মী নিহত হয়েছে। তিন দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে দাফনের পাশাপাশি দোয়া দিবস পালন করা হয়েছে। আজ বিক্ষোভ। গুলির ভয় দেখিয়ে যেমন বিক্ষোভে বাধা দেয়া অধিকার খর্ব করা, তেমনই বিক্ষোভের নামে হটকারিতা বা আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করাও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। আর আইনের পোশাক পরে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ? সেটা গর্হিত অন্যায়ই শুধু নয়, অর্পিত দায়িত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাও। পুলিশের দায়িত্ব আইনবদ্ধ ও পেশাদারত্বই কাম্য।