ন্যূনতম দায়িত্বশীলতাটুকু থাকা উচিত

৯ বছরের বাকপ্রতিবন্ধী এক কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। প্রতিবেশীর কিশোর ছেলে তাকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ তুলতেই ধর্ষণের শিকার শিশু কন্যার পিতা-মাতাকে পড়তে হয় আর এক নির্যাতনের মধ্যে। তাদেরকেও মেরে ধরে বাড়ি বন্দি করে রাখার অপচেষ্টা চলে। এ রকমই অভিযোগ তুলে নির্যাতনের শিকার দম্পতি তাদের বাকপ্রতিবন্ধী শিশু কন্যার শয্যাপাশে বসেই বলেছেন, সন্তানের রক্তক্ষরণ দেখে যখন বাড়ি থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই, তখনই ওই কিশোরের পিতাসহ তাদের লোকজন হামলা চালায়। পুলিশ অবশ্য দু’কিশোরকে থানায় নেয়। শিশু কিশোর আইনেই এদের বিচারের প্রক্রিয়া করা হয়েছে। যা যথার্থ।
কন্যা শিশুকে ধর্ষণ করেছে এক বা একাধিক কিশোর। অভিযুক্তের বয়স বিবেচনায় ওর সাবালক হতে এখনও অন্তত ছয় বছর বাকি। সে হিসেবে আইনের দৃষ্টিতেও সহানুভূতি পাওয়ার দাবিদার। তার অপরাধের মাত্রা বুঝে অবশ্যই সংশোধনাগারে রেখে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত রেখে সুধরে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরার সুযোগ রয়েছে। তাই বলে তার অপরাধ প্রশ্রয়? পিতা-মাতা বা অভিভাবকের এই প্রশ্রয়ের কারণেই যে সামাজিক অবক্ষায় তা বোদ্ধারা নিশ্চয় অস্বীকার করবেন না। যে পিতা-মাতা তার ছেলের অপকর্র্মের কারণে লজ্জিত হওয়ার কথা, সেই পিতা যদি উল্টো তার ছেলের নির্যাতনের শিকার শিশুর পিতা-মাতাকে মেরে আহত করেন তা হলে বুঝতে বাকি থাকে না, অতোটুকু বয়সে অতোবড় অন্যায় করার সাহস সে কোথায় পেয়েছে। প্রকাশ্যে অন্যায়কারীকে প্রশ্রয়দাতা পিতাকেও আইনের আওতায় নিয়ে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে ওরকম পিতার সংখ্যা সমাজে বাড়বে। যদিও পিতা-মাতার প্রশ্রয়েই শুধু উঠতি বয়সীরা বখে যাচ্ছে তাও নয়। শিশুকালেই ওদের সামনে সহজলভ্য হয়ে পড়েছে ইন্টারনেট। ছোট্ট একটি সেলফোনের মধ্যেই বিশাল এক জগৎ। যেখানে প্রবেশ করতেই চোখের পলকে পাওয়া যায় কৌতুহল মেটানোর প্রায় সবরকম চিত্র, চলচ্চিত্র। যার মধ্যে এমন কিছুও রয়েছে যা উঠতি বয়সীদের বিপথে হাতছানি দেয়। এটা অবশ্য প্রযুক্তিরই বাড়তি ধকল। এ থেকে উঠতি বয়সীদের মুক্ত রাখতে না পারার পুরোটা না হলেও কিছুটা দায় সমাজ অস্বীকার করতে পারে না। যে সমাজের দায়িত্বশীলরা প্রজন্মের প্রতি উদাসীন, সেই সমাজের গতি আর যায় হোক- সুপথে যে নেই তা বলাই বাহুল্য। তা না হলে কি শিশু অপরাধীর পরিচয় অভিযুক্ত হতে না হতে ফলাও করে কোনো গণমাধ্যম প্রকাশ করতে পারে? ন্যূনতম দায়িত্বশীলতাটুকু অন্তত থাকা উচিত।
বয়স বারো হলেও বেয়াদবিটা অনেক বড়। তবে বড়দের মতো অতোটা বড় শাস্তি অপ্রাপ্তদের পেতে না হলেও শিশু কিশোর সংশোধনাগারে রেখে সংশোধনের মতো শিক্ষা দেয়ার দাবি অমূলক নয়। তবে তাও হতে হবে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষেই। তবে অভিযোগ উঠতেই যে অভিভাবক ক্ষুব্ধ হয়ে আইনের পথে বাধা দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছেন সে বিষয়টি খাটো করে দেখা উচিত নয়। কিছুটা হলেও দায়িত্ববান করতে অবশ্যই আইনের আওতায় নেয়া দরকার। তাছাড়া তথ্য প্রযুুক্তির ভালো দিক ছোট বড় সবার জন্য উন্মুুক্ত রেখে যা ছোটদের জন্য ক্ষতির কারণ তা শুধু প্রাপ্ত বয়সে যারা চায় তাদের জন্য বদ্ধ ঘরে রাখার ব্যবস্থা করাই ভালো। অন্যথায় বাড়বেই বিপদ।