ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সকলের সহযোগিতা দরকার

সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা তথা সমাজকে সুশৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতেই বিধি বিধান প্রণয়ন ও তার প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইন প্রয়োগে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন তাদেরকে আর যাই হোক, দায়িত্বশীল বলা চলে না। যদিও অনেকেই অনেক সময় সস্তা বাহবা পাওয়ার আশায় বিধি প্রয়োগে বাধাদানের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়েন। পক্ষান্তরে প্রতিবন্ধকতা আইন প্রয়োগে নমনীয়তার খেসারত সমাজকেই বহন করতে হয়। একই সাথে আইন প্রয়োগে নিয়োজিত কর্তাদেরও দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতার ভিত মজবুত করার পাশাপাশি আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান তাও স্পষ্ট করা অপরিহার্য। মেহেরপুরের পৌর প্যানেল মেয়রের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ তারই অংশ বললে বোধকরি ভুল বলা হয় না। অবাক হলেও সত্য যে, পৌর প্যানেল মেয়রও কিছু নালিশি বিরোধ নিষ্পত্তির এখতিয়ার রাখেন। তার বিরুদ্ধে বিচার কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগ দায়িত্বহীনতারই বহির্প্রকাশ।
জনপ্রতিনিধিরা জনগণের নেতৃত্ব দেন। জনগণের ভোটেই নেতৃত্বের দায়িত্বে আসীন হন। নেতার নেতৃত্বেই সমাজ চলে। একজন চিকিৎসক একটি ভুল করলে একজন রোগীর মৃত্যু হতে পারে। আর নেতার ভুল? কোনোভাবেই খাটো করে দেখা চলে না। কারণ নেতার একটি ভুলের কারণে গোটা সমাজেই পচন ধরে। এ কারণে সামাজিক নেতৃবৃন্দের প্রতিটি পদক্ষেপই দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। যদিও রাজনীতির কারণে ভোট হারানোর ভয়ে সমাজের প্রয়োজনে অনেক সময়ই শক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না অনেকে। সে কারণে সমাজ যে গতিতে এগিয়ে যাওয়া উচিত অতোটা গতি সর্বক্ষেত্রে পায় না। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদকের কালো থাবা। মাদকবিরোধী প্রশাসনিক অভিযান জোরদার করার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে ভবিষ্যত কতোটা ভয়াবহ তা অনুমান করাও কঠিন। শুধু মাদক নয়, ভেজাল, দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, বাল্যবিয়ে, ফলফলারিতে পচনরোধক রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ, খাবারের হোটেলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রগুলোতে অনিয়মসহ নানাবিধ অনিয়ম রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, অনেক আইন আছে যা প্রয়োগের অভাবে সাধারণ মানুষ বুঝতেই চান না, ওটা করা অন্যায়। সে কারণে আইন প্রয়োগ মাঝে মাঝে নয়, নিয়মিত করতে পারলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারো কারো ওপর আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উত্থাপন হয়। তাতে শ্রদ্ধাবোধ কমে। যা কাম্য নয়। তা ছাড়া আদালত যেহেতু সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই রায় প্রদান করেন, সেহেতু প্রতিবন্ধকতার বদলে বিধি সম্মতভাবে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপনই কাম্য। আইন প্রয়োগকারীদেরও মনে রাখতে হবে, একজন নিরপরাধীও যেনো দণ্ডিত না হন। নিরপরাধী দণ্ডিত হওয়ার প্রভাবও সমাজের ওপরই পড়ে। সে কারণে আদালতকে অসহযোগিতা নয়, বরঞ্চ ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে সকলকে সহযোগিতার হাতই বাড়াতে হয়।
আইন যেহেতু সমাজের অপরাধ প্রবণতা রোধ করে, সেহেতু আইন প্রয়োগে গড়িমসি যেমন কাম্য নয়, তেমনই আইন প্রয়োগে ন্যূনতম প্রতিবন্ধকতাও বরদাস্ত করা উচিত নয়। অপরাধ করে কেউ পার পেয়ে গেলে চক্রবৃদ্ধি হারে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কেউ একবার সুবিধা নিতে পারলে আইন প্রয়োগের পরিবেশই শুধু বিঘ্নিত হয় না, আস্থাহীনতা প্রতিবন্ধকতাকে উসকে দেয়। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলফলারিতে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ইতোমধ্যেই সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। মাদকচক্র ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠায় সামাজিক আন্দোলন গতিশীল হচ্ছে না। এর মাঝে মাদকচক্রের সদস্যকে যখন ভ্রাম্যমাণ আদালতে পেশ করা হয় তখন প্রতিবন্ধকতা যেন সমাজের বেআবরো চিত্রটাই ফুটে ওঠে।