ধরিত্রীতে মানুষের স্বার্থে মানুষকে অনেক কিছুই করতে হয়

চাঁদপুরের মতলবে বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে দেড়শ। আর চুয়াডাঙ্গায়? তিন শিশুর মধ্যে একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নেয়া হয়েছে ঢাকায়। শুধু কি তাই? বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাতে পৌর শহরের পথে হাঁটাই দায়। অসংখ্য মুসল্লির অভিযোগ, ওদের কারণে পবিত্রতা রক্ষা দূরহ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও রোগীর লোকজনের আক্ষেপ উক্তি- এখানে এখন কুকুর আর মানুষের নেই ভেদাভেদ। এতোটাই যখন ভয়াবহ পরিস্থিতি তখন তা নিধন নয় কেন?
বেওয়ারিশ রোগাক্রান্ত কুকুর নিশ্চয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে অবদান রাখে না, বরঞ্চ উল্টোটাই করছে। প্রধানত যে যুক্তি দিয়ে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনকে বিতর্কিত করা হয়েছে তা হলো প্রাণী হয়ে অন্য প্রাণীর প্রতি দরদ দেখানো। যারা ওই বেওয়ারিশ কুকুরের প্রতি অতোটাই দরদী তারা কেন মানুষের জন্য মানবিক হতে পারছেন না? বাস্তবতার দূরে কৃত্রিম আবহাওয়ায় তথা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে সমাজের যে চিত্রটা সামনে আসে তা কতোটা অবাস্তব তা ক’জন পরিবেশবাদী উপলব্ধি করেন? তাছাড়া যারা জনপ্রতিনিধি তাদের ওপর জনগণের অর্পিত দায়িত্বটা বেমালুম ভুলে যাওয়ার রেওয়াজটাও যেন গাসওয়া হয়ে গেছে। সে কারণেই বেওয়ারিশ কুকুর বৃদ্ধি রোধে ও তাদের উৎপাত রুখতে ন্যূনতম পদক্ষেপটাও নেয়া হয় না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বেওয়ারিশ কুকুরে ভয়ে যে সমাজের শিশু শিক্ষার্থীরা গৃহবন্দী হয়ে পড়ে, পথে বেরিয়ে ক্ষেপা কুকুরের কামড়ে মৃত্যুশয্যায় অনিশ্চয়তার প্রহর গুনতে হয়, হারাতে হয় প্রাণ- সেই সমাজকে আর যাই হোক দায়িত্বশীল বলা যায় না। তবে হ্যা, শহরের কুকুর মারলে যখন গ্রামের কুকুর আসে বলে দাবি করা হয়, তখন গ্রামেরও বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের জন্য কেন সমন্বয় নয়? সমন্বয়হীনতাও নিশ্চয় দায়িত্বজ্ঞানহীনতারই বহির্প্রকাশ।
প্রাণী নিধন হৃদয় বিদারক বটে, তাই বলে মাংসাসীদের না খেয়ে বসে থাকলে চলে? মানুষের জীবরক্ষার্থেই তো অবিরাম প্রাণনাশ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। উদ্ভিদেরও যখন প্রাণ আছে তখন তৃণভোজীরাও কি প্রাণনাশ থেকে নিজেদের সরাতে পেরেছে? মোদ্দা কথা মানুষ জগতের শ্রেষ্ঠ জীব। শুধু শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষার্থেই নয়, বাঁচার জন্যই ধরিত্রীতে মানুষকে অনেক কিছুই করতে হয়েছে, করতে হয়, করতে হবে। ফলে মনে রাখা দরকার, কোনো জরুরি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সামনে অজুহাত খাড়া করে তা বিলম্বিত মানেই সমস্যার বোঝা বাড়িয়ে তোলা।