দেশের চামড়া শিল্প ও অর্থনীতি

 

শেষ হয়ে গেলো ঈদুল আজহার উৎসব। এবারের ঈদকে ঘিরে বিশেষত, কোরবানির পশু নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার ডালপালা বিস্তার করেছিলো প্রায় মাসখানেক ধরে। কোরবানির গরুর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সরবরাহ আসে প্রতিবেশী ভারত থেকে। এবার শুরুতেই সরবরাহে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হওয়ায় আশঙ্কা হয়েছিলো গরু কোরবানি কম হবে। এ কারণে চামড়ার মূল্য বেশি পাওয়া যাবে এমন ধারণাও করেছিলেন ব্যবসায়ী অনেকে। এ অবস্থায় ঈদের আগে ট্যানারি মালিকদের তিনটি সংগঠন যৌথভাবে সংবাদ গম্মেলন ডেকে চামড়ার ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দেয় প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। মোষের চামড়ার মূল্য বেঁধে দেয়া হয় প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঈদ শেষে দেখা যাচ্ছে কোনো আশঙ্কায়ই বাস্তব রূপ পায়নি, ঈদের কয়েকদিন আগে পর্যাপ্ত কোরবানির পশুর সরবরাহও ছিলো। অন্যদিকে মালিকদের বেঁধে দেয়া মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি মূল্যেই চামড়া বিক্রি হয়েছে।

 

আমাদের দেশে বাজার অর্থনীতির সাধারণ নীতি ও নিয়ামকসমূহ কাজ করতে পারে না। বাজারের ওপর বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট শ্রেণিগুলোর হস্তক্ষেপের কারণে। চামড়া শিল্পের মালিকরা দেখা যাচ্ছে সবসময়ই কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে বেশি বেশি লাভ করতে সচেষ্ট থাকেন। তারা বিক্রেতাকে ন্যায্য দাম না দেয়ার ব্যাপারে থাকে একাট্টা। ফলে দেখা যায় দেশ থেকে চামড়া পাচার হয়ে যায়। এর ফলে যেমন তারাও ভালো চামড়া পান না। তেমনি বিক্রেতারাও ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হন। তিনটি মালিক সংগঠনের নেতারা দাবি করেছেন, বিশ্ব বাজারে চামড়ার মূল্য হ্রাস পেয়েছে, এজন্য তারা চামড়ার মূল্য কমিয়ে নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইন্সটিটিউটের এক গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়, ট্যানারি মালিকরা ১ বর্গফুট চামড়া বিদেশে রফতানি করেন ৩ মার্কিন ডলার মূল্যে। অথচ তারা চামড়ার প্রতি বর্গফুটের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন ৬৫ টাকা অর্থাৎ ১ ডলারেরও কমে।

 

উপর্যুক্ত উচ্চ মুনাফা করা সত্ত্বেও তাদের বাহানার কোনো শেষ নেই। ট্যানারি মালিকরা কোরবানির চামড়া বিক্রেতা ও মরসুমি চামড়া ক্রয়কারীদের নানা অজুহাতে কম মূল্য প্রদান করে থাকেন। উচ্চ এবং একচেটিয়া মুনাফা নানা অনৈতিক পথ ও পন্থার উদ্ভব ঘটায়। বাংলাদেশে চামড়ার ব্যবসায়ে সেটি ঘটছে ফি-বছর। আমরা এ ব্যবসার সাথে জড়িত সব পক্ষকে বিশেষ করে ট্যানারি মালিকদের বলতে চাই, সুস্থ প্রতিযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। সবাই যাতে সন্তুষ্ট থাকে, ন্যায্যমূল্য পায়- এমন পরিবেশ তাদেরই তৈরি করতে হবে। নইলে চামড়া পাচাররোধ করা যাবে না। আর চামড়া পাচার রোধ করা না গেলে তারা নিজেরাই পানির দরে চামড়া কিনতে গিয়ে পানিতে হাবু-ডুবু খাবেন। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ, দেশের চামড়া শিল্প ও অর্থনীতি।