দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট

 

উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের এগিয়ে চলাকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের ৪৬তম বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটি বর্তমান সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ১৮তম বাজেট। বর্তমান অর্থমন্ত্রীর এটি ১১তম বাজেট উপস্থাপন এবং টানা নবম উপস্থাপন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এই বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট। অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটকে বেস্ট বাজেট হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে তিনি বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন। এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। পূর্ববর্তী অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিলো তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা, পরে তা কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ১৭ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বর্তমান বাজেটে ব্যয় বেড়েছে পূর্ববর্তী বাজেটের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ২৬ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৮ শতাংশ বেশি। বরাবরের মতো এবারও বাজেটে আয়ের প্রধান উৎস ধরা হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের আয়কে। লক্ষ্য দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অন্যান্য সব আয় ধরেও বাজেটে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। ঘাটতি মেটানো হবে ব্যাংকিং খাত থেকে নেয়া ঋণ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি এবং বৈদেশিক সহায়তা ও অনুদান থেকে। বাজেটে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। বরাবরের মতো এবারও সরকারি দল ও শরিকদের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত বাজেটকে গণমুখী এবং বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে গণবিরোধী বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

উন্নয়ন বাজেট বা এডিপিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, পরমাণু বিদ্যুত প্রকল্পসহ আটটি মেগা প্রকল্পে বড় বরাদ্দ থাকছে। বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা নেটের আওতায়। এডিপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রয়েছে যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে। এই খাতে বরাদ্দ ৪১ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এর পরই রয়েছে বিদ্যুত, শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি খাত। বাজেট নিয়ে এর আগে বিভিন্ন আলোচনায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিলো। ব্যবসায়ীরা ভ্যাটের হার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, এতে দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়ে যেতে পারে। উপস্থাপিত বাজেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাটেরই প্রস্তাব করা হয়েছে। তার ওপর আছে ব্যাংকে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর বিষয়টি, যা সাধারণ মানুষের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তাই উপস্থাপিত বাজেট নিয়ে আশা ও হতাশা দুটোই বিরাজ করছে।

বাজেট যেমন একটি সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব, তেমনি এটি রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের কৌশলপত্রও। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বড় বাজেট ঘোষণাই সব কিছু নয়। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বড় ধরনের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে বড় বাজেট জাতির আশা পূরণে সফল হবে না। আমরা আশা করি, আগামী ২৯ জুন জাতীয় সংসদে পাস করা বাজেটটি জাতির লক্ষ্য পূরণে অনেক বেশি সফল হবে।