দৃষ্টি সবার অধিকার- ডাঃ এম. বি. আজম,

১০ অক্টোবর বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষ দিবস হিসেবে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার সাড়ম্বরে সারা বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। যার মূল উদ্দেশ্য হলো- যে সমস্ত “অন্ধত্ব ও দৃষ্টি সমস্যা” প্রতিরোধ কিংবা চিকিৎসার মাধ্যমে নিরসনযোগ্য, সে সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করা। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, “সার্বজনীন দৃষ্টি সেবা-নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করুন”।

 

সারা বিশ্বে বর্তমানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। অর্থাৎ মানুষ আগের তুলনায় বেশীদিন বাঁচছে। এতে তাদের চোখ ও শারীরিক অন্যান্য সমস্যাগুলোও ক্রমান্বয়ে বেড়ে দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। অন্ধত্ব বা অন্ধত্বের কাছাকাছি মারাত্মক দৃষ্টি সমস্যায় ভুগছে এমন মানুষদের সংখ্যা বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি। যার প্রায় ৪ কোটি মানুষ সম্পূর্ন অন্ধ। এদের মধ্যে আবার শতকরা ৮০ ভাগই পঞ্চাশোর্ধ। এসব মানুষ বা অন্ধত্বের প্রায় ৯০ ভাগই বাস করে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও আফ্রিকাসহ পৃথিবীর অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে। এদের অধিকাংশকেই অন্ধত্বজনিত রোগ থেকে প্রতিরোধ বা চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। অর্থাৎ নিরসনযোগ্য। এ সম্পর্কে আমরা মোটেও সচেতন নই।

 

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ছানিজনিত অন্ধত্বে ভুগছে । যার মধ্যে পুরানো রোগী রয়েছে প্রায় সাড়ে সাত লাখ। এর সংগে প্রতি বছর আরো ২০ হাজার রোগী যোগ হচ্ছে। শিশু অন্ধত্বের সংখ্যাও বর্তমানে প্রায় চল্লিশ হাজার। তাছাড়া বিশ্বে প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে একজন অন্ধত্বের কবলে পতিত হচ্ছে। বাংলাদেশে বয়স্ক অন্ধত্বের প্রধানকারন সমূহ হচ্ছে- ছানি, গ্লকোমা, পাওয়ার জনিত দৃষ্টি সমস্যা, কর্ণিয়ার অস্বচ্ছতা ইত্যাদি। তাছাড়া ডায়াবেটিস, ব্লাড-প্রেশার ও বয়সজনিত কারনে চোখের অন্তঃ পর্দার (রেটিনা) জটিল পরিবর্তনও উল্লেখযোগ্য ভাবে দায়ী। এসব জটিলতা থেকে মুক্তি বা আগে ভাগে রক্ষা পেতে দরকার নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা যা বছরে অন্ততঃ একবার। অনেক মানুষ জানেনই না যে, তিনি স্বাভাবিক দৃষ্টি সীমার অর্ধেক দেখছেন। এটা নিয়েই তিনি চলাফেরা করছেন ও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। একটু সচেতন হলেই এটা এড়ানো সম্ভব।

 

২০২০ সালের মধ্যে এসব নিরসনযোগ্য অন্ধত্বকে উচ্ছেদ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিয়েছে ব্যাপক কর্মসূচী। যা বাংলাদেশেও পরিচালিত হচ্ছে বেশ জোরেশোরে। তাই আমাদের সবার উচিত হবে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি কর্মদক্ষ সুন্দর জীবন-যাপন উপভোগে সহযোগীতা করা।