দু পক্ষের কোনো পক্ষকেই কি মসনদ মোহমুক্ত বলা যায়?

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী কি নির্বাচন হবে? হোক আর না হোক, ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগ ও গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো বসে নেই। প্রার্থিতা ঘোষণা করছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার ঘোষণা দিচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটভুক্ত রাজনৈতিকদলগুলো আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। দেশজুড়ে চরম অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ফুটে উঠেছে। কোন দিকে যাচ্ছে দেশ? নির্বাচন আর আন্দোলনের শেষ কোথায়? জবাব মিলছে না।

 

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট সরকার মেয়াদ পূর্ণ করেছে। সংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্যে থেকেই নির্বাচন কমিশন ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল তথা সময়সূচি ঘোষণা করেছে। ঘোষিত নির্ঘণ্ট অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ। চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা দেয়ার তোড়জোড়। বিরোধীদলীয় জোটকে নির্বাচনের বাইরে রেখে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে তা সংবিধান সম্মত হলেও ঘরে-বাইরে বিতর্কমুক্ত নয়। গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এরপরও কেন নির্বাচনী তোড়জোড়? অবশ্য দেশে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে বিরোধীদলকে তোয়াক্কা না করে একতরফা নির্বাচন কোন গণতন্ত্রের সংজ্ঞাভুক্ত? সংবিধান দেশের জন্য, সংবিধানের জন্য যখন দেশ নয়- তখন কিসের জন্য জেদ? ক্ষমতার মসনদ নিশ্চয়! দু পক্ষের কোনো পক্ষকেই কি ওই মসনদ মোহমুক্ত বলা যায়? রাজনীতির লক্ষ্য যখন তাই-ই তখন মোহ অস্বাভাবিক নয়। দেশ রসাতলে, ঘরে আগুন দিয়েও সেখানে পৌঁছুনোর লক্ষ্যকে নিশ্চয় শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষ সমর্থন করে না। করছে না। শান্তির পথেই হাঁটতে হবে, সাধারণ মানুষের সমর্থন নিয়েই তো পৌঁছুতে হবে লক্ষ্যে। তার বদলে চরম অশান্তি, চরম অনিশ্চয়তার মধ্য হাবুডুবু খাচ্ছে দেশ। অবস্থাদৃষ্টে শান্তির পথে নিতে কি আবারও তৃতীয় শক্তি?  শঙ্কাযুক্ত প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

 

প্রায় দু যুগ ধরে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলই ঘুরে ফিরে ক্ষমতায় এসেছে। মাঝে অবশ্য ছেদও ঘটেছে। গণতন্ত্রের ধারায় আসার আগে স্বৈরাচারী চিত্র রাজনৈতিক সচেতনদের কাছে অজানা নয়। স্বৈরাচার সরকার হটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রণয়নের পাশাপাশি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন করা হয়। এরপরও কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ দেশ পায়নি। ১৯৯৬ সালেও একতরফা নির্বাচনের পথে হেঁটেছিলো জাতীয়তাবাদী শক্তি। পরিণাম ভালো হয়নি। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর দেশবাসী নির্বাচনের পরিবেশ পেলেও ক্ষমতার হাত বদলের পালায় ফের পাল্টে যায় জাতীয়তাবাদী দল তথা বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক আসে, আসে পরিবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক। সেনাবাহিনীকেই শেষ পর্যন্ত আড়ালে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে তুলতে হয়। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নয়, সর্বদলীয় সরকার গঠনের নিয়ম জারি করে। এটা মেনে না নিয়ে বিরোধীরা এখন আন্দোলনে। তাদের দাবি ওদের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না।

 

দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল দুটির কোনটিকে কীভাবে দেখছে দেশবাসী? দল দুটির প্রধানদের নিশ্চয় অজানা নয়। দেশের সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ চায়। সেই পরিবেশ যে নেই, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সাধারণ মানুষের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ মুছছে না। সহিংসতায় একের পর এক প্রাণহানি হচ্ছে। মৃত্যুমিছিলে যুক্ত হওয়াদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। বাসে আগুন, রাস্তায় ককটেল। রেলওয়েতে নাশকতা। এসব দেখেও কি বলতে হবে এসবের জন্যই আমাদের রাজনীতি। যে চেয়ার নিয়ে এতোকিছু, সেই চেয়ারের ঘরে আগুন রেখে কি শান্তিতে বসা যায়? হিংসা নয়, দেশবাসী চায় শান্তি।