দুর্নীতিবাজ দুষ্কৃতীমুক্ত রেলের স্বপ্ন দেখে দেশবাসী

বাংলাদেশ রেলওয়ের চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের অদূরবর্তী স্থান থেকে মধ্যবয়সী এক পুরুষকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনি তার পরিচয় দিতে পারেননি। চিকিৎসকেরা চিকিৎসা দিয়ে তাকে বাঁচাতেও পারেননি। ৪ দিন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান তিনি। পরিচয় না মেলার কারণে বেওয়ারিশ লাশ হিসেনে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা স্টেশনের উত্তরপ্রান্ত তথা ঊর্ধ্বমুখপ্রান্তের সিগন্যালের অদূরেই পড়ে ছিলেন মধ্যবয়সী পুরুষ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গোয়ালন্দঘাট থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী নকশিকাঁথা এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন তিনি। চলন্ত ট্রেন থেকে তিনি পড়ে আহত হলেন নাকি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হলো? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি। অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি হিসেবেই তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে তিনি কিছু কথা বললেও নাম সুমন নাকি সুবল তা নিয়ে যেমন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তেমনই নাটোর স্টেশন মাস্টার তাকে চেনেন বলে জানালেও তার সত্যতা স্থানীয় সাংবাদিকদের কয়েকজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাচাই করতে গিয়েও সফল হননি। মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে, দাফনও হয়েছে। ট্রেন থেকে পড়ে আহত হয়ে মারা গেলেন নাকি কোনো দুষ্কৃতী তাকে ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করেছে? এ প্রশ্নের জবাব মিলবে কি? অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন।

বেশ কিছুদিন ধরেই ট্রেনযাত্রীদের নিকট থেকে টাকা পয়সা ও মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়ার অভিযোগ উঠছে। বিশেষ করে ঢাকা-গাজীপুর রেলরুটে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হচ্ছে। ট্রেনে ছিনতাই এবং চলন্ত ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলে দেয়ার ঘটনাটি যে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য হুমকি তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। রেলভ্রমণ নিরাপদ এবং আরামদায়ক করতে না পারলে বাংলাদেশ রেলওয়ের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে বাধ্য। রেল এমনিতেই আপদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত বলে বহুদিন ধরেই অভিযুক্ত। অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণও মেলে। যাত্রী থেকে মাশুল আদায় হতাশাজনক। কেন? আড়ালে দুর্নীতি। যন্ত্রাংশ চুরিরোধ এবং সম্পদ-সম্পত্তি রক্ষা করতে না পারার আড়ালেও যে কারো কারো যোগসাজশ রয়েছে তাও অস্বীকার করা যায় না।

ট্রেনের নিরাপত্তা? যাদের ওপর নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের অধিকাংশেরই তো টুপলা খুঁচিয়ে উৎকোচ আদায়ের দরকষাকষি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন কখন? বাংলাদেশ রেলওয়ের হারানো জৌলুস ফেরাতে ভ্রমণকারীদের রেলভ্রমণে আগ্রহী করতে হবে। ভ্রমণকারীদের যাত্রা নিরাপদ করতে নাশকতা-দুর্ঘটনা রোধে শক্ত হতে হবে। দুর্নীতিবাজ, দুস্কৃতীমুক্ত রেলের স্বপ্ন দেখে দেশবাসী।