দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ উন্নয়নে অন্তরায়

 

দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। মুষ্টির চালের গচ্ছিত অর্থ দিয়ে একটি গরু কিনে মোটাতাজা করেছে, কোরবানির বাজারে একটু চড়া দামেই বিক্রি করবে। স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্বামী-স্ত্রীর পরিশ্রমের কমতি ছিলো না। স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে গুড়িয়ে গেলো সব। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পাঁচলিয়ার আর ক’জনের সাথে গরুটি ঢাকায় নেয়ার জন্য ট্রাকে তুলেছিলো। গতপরশু শনিবার ট্রাকটি গ্রামেরই রাস্তার পাশের খাদে উল্টে পড়লো। কয়েকটি গরু আহত হলো। মারা গেলো একটি। যে গরুটি মারা গেলো সেটা ওই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের। ওই পরিবারের কষ্টটা একটু উপলব্ধি করলে গোটা সমাজের চিত্রটা হৃদয়ের দৃশ্যপটে নেয়া খুব কঠিন নয়। অথচ এ সমাজের পরিবারগুলোর মোটাতাজা করা গরুগুলো যখন ঢাকাসহ বড় বড় শহরের কোরবানির হাটের উদ্দেশে নেয়া হয়, তখন সড়কে পুলিশি হয়রানির পাশাপাশি কতোরকম জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় তার ইয়ত্তা নেই।

 

আমাদের দেশে গরুর চাহিদা মেটাতে প্রতিবেশী দেশ থেকে চোরা পথে আমদানি করা হয়। চোরা পথে আমদানি করা হলেও করিডোর কর দিয়ে তা বৈধ করা যায়। গরু আনতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষীদের হাতে বাংলাদেশির মৃত্যু হচ্ছে। গতকালও যশোর বেনাপোল পুটখালী সীমান্তে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনিও গরু আনার জন্য ভারত সীমান্তে যাওয়ার পর ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের নির্যাতনে প্রাণ হারান বলে প্রাথমিকভাবে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ভারত থেকে গরু পাচার করে আনার কারণে দেশে গরুর মূল্য এবার কিছুটা কম। যারা গরু মোটাতাজা করে এখন বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের অভিযোগ, ভারত থেকে গরু পাচার করে আনার কারণে আমরা পালিত গরুর উপযুক্ত দর পাচ্ছি না। অভিযোগ অবান্তর নয়। ঘরে ঘরে গরু পালনকারীদের গরু পালনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের আগ্রহ ধরে রাখতে হবে। এ জন্য অবশ্যই উপযুক্ত মূল্য পাওয়ার মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। ঘরে ঘরে গরু মোটাতাজা করা কৃষি পরিবারগুলোর প্রতি সহযোগিতার হাত না বাড়ালে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেবে। কষ্টে পালন করা গরুর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা দরকার। কারো স্বপ্নই যেন মাঠে মারা না যায়, সেদিকে বিশেষ ও বাড়তি নজর ছাড়া দেশ স্বনির্ভর হবে কীভাবে? দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ উন্নয়নে অন্তরায়, দারিদ্র্য বিমোচনে বাধা।

 

দেশে গরু পালনের সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। গরু পালনের সময় প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পাশাপাশি পালনকারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন। গরুর উপযুক্ত মূল্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি গরু বিক্রির জন্য বড় বড় শহরে নেয়ার সময় পুলিশি হয়রানি বন্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। ভারত থেকে গরু পাচার করে আনার সময় নির্বিচারে মানুষের মৃত্যু দেশের জন্য মর্যাদাহানিকরও বটে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হবে। হত্যা বন্ধের পুনপুন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন দরকার। শুধু গরু নয়, যে কোনো দ্রব্যই চাহিদা পূরণে পরনির্ভরশীলতা পরিহার করতে না পারলে চাহিদায় লাগাম দিয়েও সবসময় স্বনির্ভরতা অর্জন করা যায় না। চাহিদায় লাগাম দেয়ার পাশাপাশি চাহিদা পূরণে স্বনির্ভরতার পথেই হাঁটতে হবে। পরনির্ভরতা দূর করতে দরকার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সম্মিলিত প্রচেষ্টা।