দারিদ্র্য বিমোচনের তাগিদ উপলব্ধি প্রয়োজন

 

ঈদ উপলক্ষে কেউ তার প্রিয়জনকে দিচ্ছেন হাজার হাজার টাকার পোশাক, কোনো কোনো মা-বাবা আদরের সন্তানের একটি নতুন জামার আবদার মেটাতে না পারার মনোকষ্টে আত্মহত্যা করছেন। নতুন জামা না পেয়ে কিশোরীর আত্মহত্যার উদাহরণও বাড়ছে অবহেলিত এ জনপদে। শিশু-কিশোর নারী-পুরুষ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার আত্মহনন বৃদ্ধির জন্য শুধু কি আত্মহত্যা প্রবণতা দায়ী? বেকারত্ব, মাদক, পারিবারিক নির্যাতনও দায়ী। এসবের আড়ালে লুকিয়ে থাকা আসল ঘাতকের নাম ‘দারিদ্র্য’।

সমাজে ধনী-গরিবের ব্যবধান-বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। যে সমাজে এখনও দাদন ব্যবসা বিদ্যমান। তৃণমূলে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায়কারীরা কাবুলিওয়ালাদেরও হার মানিয়েছে। মাঝে মাঝেই কিস্তি আদায়কারীদের কটুক্তি সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হওয়ার খবর পাওয়া যায়। পত্রিকার পাতায় গুরুত্ব সহকারে তা ছাপাও হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর দাম যে হারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে, সেভাবে বাড়ে না দিনমজুরের শ্রমের দাম। স্বল্প চাকরি করাদের বেতন বোনাস বাড়ে না। এরপর রয়েছে প্রান্তিক কৃষককূলকে ফসলের উপযুক্ত মূল্য যথাসময়ে না দেয়ার নানামুখি চক্রান্ত। কর্মসংস্থান? বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে দরিদ্র পরিবারের বোঝা হয়ে হতাশাগ্রস্ত যুবক-যুবতীর পরিপূর্ণ পরিসংখ্যান নেই। থাকলে সমাজের বাস্তব চিত্র কতোটা ভয়াবহ তা দেশ পরিচালনায় নিয়জিতরা নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারতেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে না পারার কারণে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য নেই। এরকম অসংখ্য কারণ যে সমাজে বিদ্যমান, সে সমাজে আত্মহত্যাকে শুধু প্রবণতা বললে বোধকরি চরম বাস্তবতাকে অস্বীকারই করা হয়।

আত্মহত্যা যেমন ধর্মীয় অনুশাসনে বারণ, তেমনই দেশের প্রচলিত আইনেও নিষিদ্ধ। এরপরও সমাজে যে হারে আত্মহত্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা থামাতে না পারলে সমাজের সকলকেই চরম খেসারত দিতে হবে। সে আলামত ইতোমধ্যেই ফুটে উঠেছে। অবশ্যই আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে উৎসব। ইসলামধর্মে ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব ভাগাভাগি করে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য জাকাত ফরজ অর্থাৎ অবশ্যপালনীয় বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাসে জাকাত আদায় করলে সওয়াব অন্য সময়ের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। এরও যথেষ্ট তাৎপর্য রয়েছে। এখন প্রশ্ন- একজন সবল পুরুষের প্রাপ্য সুযোগ অনুযায়ী শ্রম দিয়েও তার আদরের সন্তানের আবদার পূরণের জন্য জাকাতের জন্য হাত পাততে হবে কেন? কারণ, শ্রমের যা দর, তাতে নুন-ভাতের ব্যবস্থা করতেই শেষ। সন্তানের আবদার পূরণ করবেন কীভাবে? ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষি? ফসল ফলাতে গিয়ে ধার-কর্য করতে হয়। ফসল উঠলে লোকসানে বেচতে হয়। তিনিই বা কি করে সন্তানের নতুন জামা দেয়ার মতো অর্থ গচ্ছিত করবেন? যে পরিবারে বেকারত্বের বোঝা, সে পরিবারের সচ্ছলতাই বা আসবে কীভাবে?

এবারের ঈদ আসন্ন। আর মাত্র কয়েকদিন পরই উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। চলছে ঈদ উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি। এরই মাঝে একের পর এক আত্মহত্যার খবর পত্রিকার পাতায় ঠাঁই পাচ্ছে। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, সন্তানের নতুন জামার আবদার মেটাতে না পেরে অসহায় এক মা আত্মহত্যা করেছে। ক’দিন আগে এক স্কুলছাত্রী নতুন জামা না পেয়ে নিজেকে নিজেই শেষ করেছে। এসব আত্মহত্যা প্রবণতার কুফল হলেও দারিদ্র্য বিমোচনেরই যে তাগিদ তা উপলব্ধি প্রয়োজন।