তিনি শুধু ফ্রেমে বাঁধা অভিভাবক নন

 

দিন আসে দিন যায়, মানুষ আসে মানুষ যায়। সকল দিন যেমন সমান নয়, তেমনই সকল মানুষও একরকম নয়। ক’জন মানুষ সাইফুল ইসলাম পিনুর মতো হয়? তিনি এসেছিলেন, চলে গেছেন। রেখে গেছেন আদর্শ। নিরপেক্ষ নয়, ন্যায়ের পক্ষে সর্বদা সোচ্চার থাকতেন, ন্যায় প্রতিষ্ঠায় নিষ্ঠাবান হওয়ার কথাই বলতেন। অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী, তারণ্যে ভরপুর মানুষটা এক বছর আগে আজকের এদিনে হঠাত বিদায় নিলেন। ভাসালেন শোকের সাগরে।

 

এক বছর আগে আজকের এইদিনে মাত্র ৫৫ বছর বয়সেই সাইফুল ইসলাম পিনু চিরবিদায় নেন। শূন্যতা নেমে আসে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পরিবারে, সাংবাদিক সমাজে, রাজনৈতিক মহলে। সাহিত্য ও সামাজিক আন্দোলনে তার অবদান কোনোভাবেই অস্বীকার করার জো নেই। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে পরপর দুবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে শুধু জনপ্রিয়তার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বললে ভুল বলা হয়। ছোট-বড়, ধনী-গরিব সকলের সাথে সমানভাবে খোলামনে মিশতেন। অন্যের কষ্ট উপলব্ধি করে তিনি নীরব থাকতে পারেননি কখনোই। পূর্ণ বয়সেই শুধু নয়, ছাত্রজীবনেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন ছাত্র-জনতার অকৃত্রিম বন্ধু। চুয়াডাঙ্গা কলেজটি সরকারিকরণে তার অবদান যেমন অস্বীকার করা যাবে না, তেমনই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর অধিকার আদায়ে সংগঠিত হতে শেখানোর শিক্ষক বললেও ভুল হবে না। সমাজের সর্বস্তরেই বিচরণ ছিলো যে মানুষটির, সেই মানুষের অনুপস্থিতি যে পদে পদে পরিলক্ষিত তা অস্বীকার করা যায় না।

 

দৈনিক মাথাভাঙ্গা প্রস্তাবিত সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালের ২৬ মার্চ। এ সংখ্যাটির সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন হামিদুল হক মুন্সি। ছাড়পত্র নিয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে দৈনিক মাথাভাঙ্গার যাত্রা শুরু হয় একই বছরের ১০ জুন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে টানা ১০ বছর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন সাইফুল ইসলাম পিনু। পরবর্তীতে তাকে প্রধান সম্পাদক হিসেবে মাথার মনি করে রাখে মাথাভাঙ্গা পরিবার। তিনি রাজনৈতিক একটি দলের মতাদর্শ লালন করলেও তার ন্যূনতম প্রতিফলন পত্রিকায় পড়তে দেননি। এর মধ্যদিয়েই স্পষ্ট যে, তিনি কতোটা উদার, কতোটা মহৎ মনের মানুষ ছিলেন। সঠিক খবর সাহসের সাথে উপস্থাপন আর ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনের কথাই বলতেন তিনি। সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করতে হবে। সুষ্ঠু সংস্কৃতির ধারা ধরে রাখতে সর্বদা সচেষ্ট হতে হবে। সুন্দর সমাজ গঠনে যে যেখানে আছেন তাকে সেখানে রেখেই দায়িত্বশীল করার লক্ষ্যে ধরতে হবে কলম। মাথাভাঙ্গা প্রতিষ্ঠা লগ্নের এসব প্রতিশ্রুতি মাথাভাঙ্গা পরিবার ভোলেনি।

 

হবে না, হচ্ছে না- নয়। হবে না কেন, হতে হবে। মন্দকে দূরে ঠেলে নয়, কাছে টেনেই ভালো করতে হবে। তা হলেই না মনে হবে, কিছু করতে পারলাম। এরকমই ইতিবাচক মনের কাছের মানুষ আমাদের মাঝে নেই, তা মানতে নারাজ মাথাভাঙ্গা পরিবার। তিনি শুধু ফ্রেমে বাঁধা অভিভাবক নন, ছায়ার মতো পাশে থাকা অভিভাবক হিসেবেই আছেন,থাকবেন। মূলত সে কারণেই তাকে প্রধান সম্পাদক হিসেবেই রেখেছি আমরা। সম্প্রতি বিধি বিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণের কারণে প্রিন্টার্স লাইনে তা দৃশ্যমান রাখা যায়নি। হৃদয়ে গাঁথা যে নাম সে নাম মুছবে কীভাবে? সাইফুল ইসলাম পিনুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ, চুয়াডাঙ্গা উন্নয়ন ফোরাম সিডিএফসহ বিভিন্ন সংগঠনের তরফে কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার পারিবারিকভাবে দোয়া খায়েরের আয়োজন করা হয়। সকল আয়োজন হোক সাইফুল ইসলাম পিনুর বিদেহী আত্মার মাগফেরাতে সহায়ক। সাইফুল ইসলাম পিনুর মৃত্যুর এক বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন তার সহধর্মিনী নাজমা আরা খাতুন মমতা। তিনিও ছিলেন অসাধারণ এক নারী। অসম্ভব ভালো মানুষ। বহুগুণের অধিকারী। তার মৃত্যুর এক বছরের মাথায় সাইফুল ইসলাম পিনুও তার রেলপাড়াস্থ বাসভবনে একমাত্র মেয়ে পিয়াকে রেখে চলে যান। আগামী ১৯ নভেম্বর নাজমা আরা খাতুন মমতার দ্বিতীয় মৃত্যুবাষির্কী। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করছে মাথাভাঙ্গা পরিবার। মাথাভাঙ্গা’র অগ্রযাত্রায় তার অবদান অনস্বীকার্য।

 

সংবাদপত্র সমাজের আয়না। যদি সেই আয়নার কাঁচ বাঁকা হয়, হয় ডেউ খেলানো? পারদ যদি হয় ঘোলা? তা হলে সমাজের স্বচ্ছ ছবি ওই আয়নায় প্রতিফলন হবে? এরকম প্রশ্ন তুলে মাথাভাঙ্গার কলম সৈনিকদের তিনি দায়িত্বশীল করতেন। সেই তিনি নেই, তার আদর্শ আছে। আছে নির্দেশনা। তার চলে যাওয়া কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে নয়, শক্ত হয়ে তারই মতো সাহসী হওয়ার শপথ মাথাভাঙ্গা পরিবারের। সহায়ক হোক সকলে। প্রত্যাশা আমাদের।