তারামণিরা নির্যাতন থেকে রেহাই পাক, সংসারে পাক স্বস্তি

 

পিতা দরিদ্র। বিয়ের পর স্বামীর ঘরই সুখ সচ্ছ্লতার স্বপ্ন ছিলো দু নয়নজুড়ে। স্বামীর সংসারে যাওয়ার পর যখন নির্যাতন শুরু হলো তারামণির ওপর, তখন দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে শুরু করলেন তিনি। সন্তানও এলো সংসারে। এরপরও বন্ধ হয়নি নির্যাতন। সর্বশেষ গত পরশু তাকে তার স্বামী-শাশুড়ি নির্যাতন করে। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারামণির শয্যাপাশে থাকা তারই এক নিকটজন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, এর আগেও বহুবার নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তারামণি পিতার বাড়ি ফিরলেও উপায় না পেয়ে আবারও স্বামীর সংসারে গেছে। বারবার নির্যাতন করলেও তারামণির আর কোনো পথ না থাকায় সবই নীরবে সহ্য করতে হয়। এসব তথ্য দিতে গিয়ে তিনি নাভিশ্বাস তুলে বলেন, তরামণিরা নির্যাতনের শিকার হওয়ার জন্যই জন্মেছে।

নারী নির্যাতন দীর্ঘদিনের সমস্যা। ব্যাধি বললেও ভুল হয় না। সামাজিক-পারিবারিক এ ব্যাধি নিরাময়ের জন্যই দীর্ঘদিন ধরে নারী শিক্ষাসহ বাল্যবিয়ে রোধে সরকারি বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়ে পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে নিখরচায় নারী শিক্ষা কর্মসূচি অন্যতম। আর বাল্য বিয়ে রোধ? প্রশাসনিকভাবেই শুধু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না, সামাজিকভাবেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার নানামুখি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। নারী সমাজকে শিক্ষিত করতে পারলে জাতি যেমন শিক্ষিত হবে, প্রজন্ম পাবে তেমনই শিক্ষিত নারীকে। অসহায়ের মতো নির্যাতনের শিকার হতে হবে না। বাল্যবিয়ে নারীর স্বনির্ভর হওয়ার মতো শিক্ষাবঞ্চিতই করে না, চরম যন্ত্রণার মধ্যে ঠেলে দেয়। দারিদ্র্য আর অসচেতনতাই মূলত নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্তরায়। অবশ্য বাল্যবিয়ের জন্য শুধু অসচেতনতাকেই দায়ী করা যায় না, বখাটে চক্রের উৎপাতও এ জন্য কম দায়ী নয়।

পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে নারী শিক্ষার বিষয়ে অভিভাবকদেরও অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। নারী শিক্ষা সম্প্রসারণের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনে প্রয়োজন পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের জোগান। নারী শিক্ষার হার বাড়লেও কর্মসংস্থানের সঙ্কট কাটেনি। শিগগিরই এ সঙ্কট দূর হওয়ার তেমন সম্ভাবনাও অনুপস্থিত। এদিকে বিশেষ নজর দেয়ার পাশাপাশি দরকার পারিবারিক নির্যাতন রোধে আইন প্রয়োগে আন্তরিকতা। যদিও নির্যাতনের শিকার অধিকাংশ নারী সে পথে হাঁটতে অনাগ্রহী মূলত পরনির্ভরতার কারণেই। স্বামীর সংসারে না হলে পিতার বাড়ি। দরিদ্র পিতার ঘাড়ের বোঝা না হয়ে শত নির্যাতনের শিকার হয়েও সমাজের তারামণিরা নির্যাতক স্বামীকেই তুষ্ট করতে মরিয়া। একদিন স্বামী নিশ্চয় নির্যাতন বন্ধ করবে- এই আশাই মূলত ওদের বেঁচে থাকা। সমাজের তারামণিরা নির্যাতনমুক্ত হোক, সংসারে পাক জীবনের মূল্যবোধ।