ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের এটি সবচেয়ে বড় চালান

 

রাজধানীর উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের বৌদ্ধমন্দিরের পাশের খাল থেকে ১৮ জুন বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১৯ জুনও একই স্থান থেকে উদ্ধার হয় ৩২টি ম্যাগাজিন। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলির মধ্যে রয়েছে ৯৫টি ৭.৬২ বোরের পিস্তল, দুটি নাইন এমএম পিস্তল, ১০ হাজার ৬০টি গুলি (এর মধ্যে ৭.৬২ বোরের গুলি ২২০টি ও নাইন এমএম পিস্তলের গুলি ৮৪০টি), ৪৬২টি ম্যাগাজিন (৭.৬২ বোরের ১৮৯টি, এসএমজির ২৬৩টি ও গ্লোক পিস্তলের ১০টি), ১০টি বেয়নেট ও গুলি বানানোর ছাঁচ ১০৪টি। এগুলো সাতটি ব্যাগের মধ্যে ভরে খালে ফেলে রাখা মাত্র কয়েক দিন আগে শেষ হওয়া পুলিশের বিশেষ অভিযানের কারণে সন্ত্রাসীরা ভয়ে অস্ত্রগুলো ফেলে রেখে গেছে। অস্ত্রগুলো আনার পেছনে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় চক্রান্ত থাকতে পারে বলেও মনে করছে পুলিশ। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। অস্ত্রগুলো সচল ও এখনো ব্যবহার উপযোগী। অস্ত্র উদ্ধারের এই ঘটনাটি সম্প্রতিকালের অন্যতম বড় ঘটনা। ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের এটি সবচেয়ে বড় চালান। এর আগে দেশে এতো সংখ্যক ছোট আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেনি। এর আগে বড় অস্ত্র উদ্ধার হয় হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সীমান্তবর্তী সংরক্ষিত বনাঞ্চল দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে। কয়েক দফায় সেখান থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়।

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সরকারি মালিকানাধীন ইউরিয়া সার কারখানার সংরক্ষিত জেটি ব্যবহার করে ১০ ট্রাক অত্যাধুনিক অস্ত্র-গোলাবারুদ খালাসের সময় আটকের ঘটনার পর, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে এবং এবার রাজধানীর উত্তরায় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা বড় ধরনের ঘটনাগুলোর অন্যতম। অস্ত্র উদ্ধারের কারণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ অপশক্তি কিংবা সমাজবিরোধী মহলে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু যারা এসব মারাত্মক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত তাদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি উৎস সন্ধান করে দৃষ্টান্তমূলক প্রতিকার করাটা খুব জরুরি। আগের আটককৃত অস্ত্র চালানগুলোর মামলা এখনো বিচারাধীন। অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটক কোনোভাবেই সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। এর সাথে দেশি-বিদেশি অপচক্রের যোগসাজশ থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা অতীতের সেসব বিষয়কে সঙ্গতই সামনে নিয়ে এসেছে।

সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর বলেই তাদের ঘোষণায় বারবার বলা হচ্ছে। আমরা তার প্রতিফলন দেখার প্রত্যাশা করি। শুধু অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রমের মধ্যেই না বরং অতীতে যেসব অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, সেগুলোর আনার সাথে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এতো বড় বড় অস্ত্রের চালান যখন দেশের ভেতরে এবং খোদ রাজধানীতে চলে এসেছে, তখন এ রকম আরো বড় অস্ত্রের উৎস যে পুলিশের নজরদারির বাইরে নেই তাই বা কে বলতে পারে? তাই আমাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনেই গভীর দৃষ্টি দিয়ে উৎস সন্ধান করে অপরাধীর কঠোর প্রতিকার নিশ্চিত করতে হবে। সব অপতৎপরতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রত্যেকটি বাহিনীকে সজাগ থাকার প্রয়োজনীয়তাও আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।