চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় ডায়রিয়া আক্রান্ত দু রোগীর মৃত্যু এবং

ডায়রিয়া নতুন কোনো রোগের নাম নয়। চিকিৎসাও এখন আর তেমন জটিল নয়, যেমন জটিল ছিলো স্যালাইন আবিষ্কারের আগে। সরকারি হাসপাতালে জীবনরক্ষাকারী স্যালাইন প্রায় সব সময়ই পর্যাপ্ত থাকে, সামান্য সচেতনতাই এ রোগ থেকে সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। অথচ চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার পৃথক গ্রামে ডায়রিয়া আক্রান্ত দুজন পর পর দু দিনে মারা গেলেন। যদিও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হিসেবে ভর্তির পর যদি মারা যায় তাহলে অধিকাংশ সময়ই হৃদরোগ বা রোগী অন্য কোনো রোগে ভুগছিলেন বলে দাবি করা হয়। অবশ্য এ দাবির সাথে রোগীর লোকজনকে একমত হতে দেখা যায় না। সঙ্গত প্রশ্ন, তবে কি মূল ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়? সে কারণেই প্রকৃত কারণ শনাক্তে তদন্ত প্রয়োজন।

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার নতিপোতার ছুটিপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার আমির হোসেন (৬০) ডায়রিয়া আক্রান্ত হন। তাকে প্রথমে নেয়া হয় দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে। ভর্তির কয়েক ঘণ্টার মাথায় মারা যান তিনি। তাকে বা তার নিকটজনদের অসচেতনতার কারণে হাসপাতালে নিতে বিলম্ব না হয় একটা কারণ হতে পারে, দামুড়হুদা গোপালপুর উত্তরপাড়ার সাকিব আল হাসান ওরফে আলামিনের (৩০) ক্ষেত্রে? তিনি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগেরই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন কয়েক বছর ধরে। যার নিজেরই দায়িত্ব ছিলো স্বাস্থ্যসেবা, তার কি সচেনতায় ঘাটতি ছিলো? নাকি ডায়রিয়া নামক রোগটা পুরোনো চেহারায় এলেও ভেতরটা নতুন? সাকিব আল হাসানের মৃত্যুর পর অবশ্য চিকিৎসক বলেছেন, আগে থেকেই হার্টে সমস্যা ছিলো। যদিও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে আরো একটি তথ্য। তাদের কারো কারোর প্রশ্ন- উত্তেজকই কি ওর হার্টব্লক বা ডায়রিয়ার জন্য দায়ী? অবশ্যই এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজা দরকার। স্বাস্থ্য বিভাগ এ ধরনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উন্মোচনে আন্তরিক হলে এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পাবে। আর যদি ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে মৃত্যু হয়, আর সেই মৃত্যুর দায় এড়াতে হার্ট বা অন্য রোগের অজুহাত খাড়া করে দায় এড়ানোই প্রবণতা হয় তাহলেও তো ঊর্ধ্বতন কর্তাদের টনক নড়া উচিত।

উন্নত বিশ্বে যখন গর্ভের সন্তানের শরীরে অস্ত্রোপচার করে সুস্থ করে তোলা হচ্ছে, তখন আমাদের দেশে অনেক চিকিৎসক আছেন যারা ৫ কেজি টিউমার অপসারণ করেই সাংবাদিক ডাকেন। যদিও এ উক্তি বা উদাহরণ দিয়ে আমাদের সমাজের চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা বোঝানো উচিত হবে না। কেননা, বহু চিকিৎসক রয়েছেন যারা শত অপ্রতুলতার মধ্যেও অনেক উন্নত দেশের চিকিৎসাকেও হার মানাচ্ছেন। যদিও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করে তুলতে না পারার দায়ভার চিকিৎসক এড়ালেও সরকারি হাসপাতাল এড়াতে পারে না। ডায়রিয়া রোগীকে কেনো সুস্থ করে তোলা গেলো না তা অবশ্যই পর্যালোচনা করা দরকার। কোথাও কোনো ত্রুটি থাকলে তা সুধরে নেয়া জরুরি।