চলন্ত ট্রেনে এবং ট্রেন থেকে পাথর নিক্ষেপ

 

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, ট্রেন থেকে পাথর নিক্ষেপ? অবশ্যই গুরুতর অপরাধ। ট্রেনে যারা পাথর নিক্ষেপ করে তাদের ধরে যেমন আইনে সোপর্দ করা দরকার, তেমনই ট্রেন থেকে পাথর নিক্ষেপকারীদেরও ধরে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি। আর যারা ট্রেনলাইন উপড়ে, ক্লিপ খুলে নাশকতা চালায় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি সার্বজনীনই হওয়া উচিত। হরতাল আহ্বান গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও নাশকতার অধিকার নেই।

 

রেলওয়ে দেশের অন্যতম প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। নানাভাবেই রেলযোগাযোগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ মাধ্যমকে নিরাপদ করার দায়িত্ব সকলের। বাংলাদেশ রেলওয়ে জাতীয় সম্পদ। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, দুর্নীতির কারণে রেলওয়ের স্বর্ণযুগ সেকেলে গল্পে রূপান্তর হয়েছে। অবশ্য আধুনিকায়নসহ রেললাইন সম্প্রসারণে নানামুখি উদ্যোগ যে একেবারেই নেই, তা নয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে অঞ্চলভিত্তিক গণ্ডি থেকে মুক্ত হয়েছে, ব্রডগেজের মাঝে অতিরিক্ত লাইন স্থাপনের মাধ্যমে মিশ্রগেজ লাইনে উন্নীত করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সাথে রাজধানীর যেমন সরাসরি ট্রেনযোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে, তেমনই পশ্চিম-দক্ষিণবঙ্গের সাথেও রাজধানীর ট্রেনযোগাযোগ গড়ে তোলা হয়েছে। এতে রেলভ্রমণকারীর সংখ্যা শুধু বৃদ্ধিই হয়নি, সড়কের ওপর বাড়তি চাপ হ্রাস পেয়েছে। রেলভ্রমণ নিরাপদ করতে পারলে স্বর্ণযুগকে টপকে সুবর্ণ স্বর্ণযুগে পৌঁছুনো অবশ্যই অসম্ভব কিছু নয়।

 

ট্রেনে যারা পাথর নিক্ষেপ করে তাদের অধিকাংশই কিশোর বা উঠতি বয়সী। কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে বোধকরি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করা সম্ভব নয়। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার সচেতনমহলকে শিশু-কিশোর তথা উঠতি বয়সীদের সচেতন করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সচেতন করতে না পারলে এলাকাবাসীর উদ্যোগেই পুলিশে নালিশ করা উচিত। পুলিশের এ বিষয়টিকে রেলওয়ে বিভাগের বলে দায়িত্ব এড়ানো কাম্য নয়। অপরদিকে জিআরপির দায়িত্বশীলদেরও উদাসীন হলে চলবে না, কোথায় কখন কীভাবে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে তা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনকে অবহিত করে প্রতিকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া ট্রেন থেকে পাথর নিক্ষেপের ঘটনাকেও খাটো করে দেখলে চলবে না। নির্দিষ্ট একটি ট্রেন থেকে চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুর স্টেশনের নিকট পাথর নিক্ষেপ করার ঘটনা ঘটলেও ট্রেনের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতরা কেন তা রোধ করতে পারছেন না? একের পর এক পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটবে, আহত হবে পথচারী। ট্রেন এলেই যুদ্ধ বিমানের মতো আতঙ্কে মানুষ বাঙ্কার খুঁজবে এটা কি কোনো সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে?

 

ট্রেন লাইনচ্যুত রোধ এবং সময়সূচি অনযায়ী ট্রেন চলাচলের দিকে বিশেষ নজর দেয়ার পাশাপাশি পাথর নিক্ষেপ রোধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের আন্তরিক হতে হবে। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপে উদীয়মান প্রকৌশলীর যেমন প্রাণ ঝরেছে, তেমনই অনেকেই আহত হয়েছেন। এতে রেলভ্রমণকারীদের মধ্যে যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না। আর ট্রেন থেকে পাথর নিক্ষেপও নীরবে মেনে নেয়া যায় না। এসব রোধে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন।