গণমাধ্যমের ওপর আঘাত অশনি সংকেত

 

হরতাল, বিক্ষোভ, অবরোধ কর্মসূচিতে উত্তপ্ত দেশ। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিরও শেষ নেই। সাধারণ মানুষ চায় শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন। তা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ার কারণেই দেশ জুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক। হরতালকে কেন্দ্র করে ককটেল ও বোমা নিক্ষেপ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুরসহ নানা ধরনের ঘটনায় বীভৎস চিত্র ফুটে উঠছে। গণমাধ্যমকর্মী, গণমাধ্যমের গাড়ি ও কার্যালয়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। যা অশনিসংকেত।

 

শুধু আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘাত নয় বরং হামলা করা হয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসভবন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতেও। উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, এ হরতালে হামলার শিকার হয়েছে দেশের গণমাধ্যম। যেখানে টেলিভিশন, সংবাদপত্র, অনলাইন সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন কার্যালয় ও গণমাধ্যমের গাড়িতে হামলা করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার শিকার হন সংবাদকর্মী ও ক্যামেরাপারসন। কোনো কিছুর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করা এবং প্রতিবাদ করা গণতান্ত্রিক অধিকার, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা যদি হয় সহিংস, হামলা, বোমাবাজি তবে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। গণমাধ্যম যেমন নির্যাতিত বঞ্চিতদের কণ্ঠস্বর, তেমন স্বার্থবাদীদের স্বার্থ রক্ষার্থেও ব্যবহৃত হয়। জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গণমানুষের গণমাধ্যম হিসেবে অবস্থান করে না নিতে পারলে সেই গণমাধ্যমের অপমৃত্যু অনিবার্য। বোমা মেরে কি মতবাদ বদলানো যায়? তা যখন সম্ভব হয় না, তখন বোমা কেন?  সম্প্রতি ঢাকার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। রাজপথেও হামলা চালিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের আহত করা  হয়েছে। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। শক্তহাতে দমন করতে হবে। হামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থসমূহকে অধিক দায়িত্বপালনে আন্তরিকতা প্রয়োজন।
পরস্পরের দিকে দায়ভার চাপানোর এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে, আসল অপরাধী চিহ্নিত করা ও শাস্তি নিশ্চিত করাই গণতন্ত্রের জন্য শুভ। দেশের রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই দু দল বসে সমাধান করুক। সংঘাত কোনো সমস্যার সমাধান নয়। দেশের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। গণমাধ্যমের ওপর হামলা গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। গণমাধ্যম আক্রান্ত হলে গণতন্ত্রের দুর্বলতা প্রকাশ পায়।