খ্রিষ্টীয় নববর্ষের প্রথম দিন : শুরু হোক নতুন পথযাত্রা

আজ ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিন। নববর্ষ। বিশ্বের বৃহদাংশ জুড়েই বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য সব আয়োজন করা হয়। বিশ্বব্যাপি নববর্ষের এমন আবেদন বা প্রভাব সৃষ্টি হওয়ার পেছনে ইতিহাস আছে, এটা একদিনে হয়নি। যীশু খ্রিস্টের জন্ম তারিখ হতে যে দিন-ক্ষণ-মাস-বছরের হিসেব শুরু হয়েছিলো তা আজ গ্রেগোরিয়ান বা খ্রিস্টাব্দ বর্ষ হিসেবে স্বীকৃত। এক সময় বিশ্বের এক বিশাল অংশই ছিলো ব্রিটিশ শাসনাধীনে। ফলে ইংরেজ জাতির উদ্ভাবিত প্রযুক্তি-জ্ঞান-শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদির ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, তার অধীনস্থ দেশগুলোর ওপর। অধীনস্থ দেশসমূহের অনেকেরই নিজস্ব পঞ্জিকা বা বর্ষ থাকলেও শাসকগোষ্ঠীর সর্বব্যাপি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের কারণে কালক্রমে তা গৌণ হয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে, খ্রিস্টাব্দ নববর্ষ আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিজাত বিষয় না হলেও আমাদের রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি জীবনের সর্বত্রই প্রভাব ফেলেছে। যা অস্বীকার করার জো নেই।

 

একটি বছর গত হলো। কালের গহ্বরে হারিয়ে গেলো। দেয়াল থেকে খসে পড়লো পঞ্জিকা। নতুন বছর সমাগত। যদিও কালের সমুদ্রে এপা বুদবুদতুল্যও নয় তবু আমাদের জীবনপরিক্রমায় মানবসৃষ্ট কালগত এ বিভাজনের যে অবিচ্ছেদ্য ও স্বতন্ত্র একটি ভূমিকা তৈরি হয়েছে তা এড়ানোর উপায় নেই। নতুন বছরের সূচনালগ্নে আমরা অতিক্রান্ত বছরের ভালোমন্দের হিসাব মিলিয়ে, ছক তৈরি করি নতুন বছরের নতুন পথযাত্রার। আর তা যে নিছক কাগুজে হিসাবনিকাশে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং আমাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত চৈতন্যেও তাত্পর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে- তাতেও সন্দেহ নেই। সভ্যতা যতো এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষের ব্যস্ততাও ততো বাড়ছে। রুদ্ধশ্বাস ব্যস্ততার মধ্যে নববর্ষ চমত্কার একটি অবকাশ এনে দেয়। আর যাই হোক উপলক্ষ তো!

 

বরাবরের মতো এবারও সকল উত্সব-আয়োজনকে ছাপিয়ে উঠেছে শান্তি, সম্প্রীতি ও অগ্রগতির জন্য বিশ্বজনীন এক আকুলতা। যদিও আমরা রাজনৈতিক অস্থিরতায় হাপিয়ে উঠেছি। নববর্ষের দিনেও দেশ জুড়ে অবরোধ। অবশ্যই মানবসৃষ্ট দুর্যোগের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নির্মম তাণ্ডবও। মানবসৃষ্ট দুর্যোগ প্রধানত এশিয়া-আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কেউ। প্রকৃতির এ ক্রমবর্ধমান রুদ্রমূর্তির জন্যও মানুষের বাড়াবাড়িই যে দায়ী তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বটে। ফলে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ অভ্যন্তরীণ নানা সঙ্কটের পাশাপাশি প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিসমূহের টানাপোড়েনের আবর্তে পড়ে তাদেরকে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে পদে পদে। বিশ্বমানবের সম্মিলিত সদিচ্ছা ও সংকল্পের নিকট বারবার পরাস্ত হয়েছে হিংসা ও হানাহানির সকল প্ররোচনা। সেই মঙ্গলালোকে উদ্ভাসিত হোক সারাবিশ্ব। নতুন বছরের সূচনালগ্নে আমাদের দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হোক। ফিরে আসুক স্বস্তি।