খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রফেসর . মুহাম্মদ ইউসুফ আলী: আজ ১৭ রমজান। মহিমান্বিত মাহে রমজানের মাগফেরাতের দশকের আজ সপ্তম দিন। রোজার রয়েছে হাজারো উপকারিতা। মানুষের মধ্যে রয়েছে অনেক ধ্বংসাত্মক কূ-প্রবৃত্তি যেমন, কাম-ক্রোধ, গর্ব-অহঙ্কার, হিংসা-দ্বেষ, লোভ-লালসা ইত্যাদি। এই প্রবৃত্তিগুলোই সমাজে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, দলাদলি, রেষারেষি, ফেতনা-ফাসাদ ও যিনা-ব্যাভিচারের মতো মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি করে। প্রকৃতপক্ষে রোজার মাধ্যমে এই সমস্ত পশুবৃত্তি ও কূ-প্রবৃত্তিকে দমন করা সহজ হয়। ফলে ব্যক্তিগত ও  সামাজিক জীবন হয় রোগমুক্ত। রোজা লজ্জাস্থানের খায়েশ দূর করে। এর ফলে যিনা-ব্যাভিচারের মতো মারাত্মক ব্যাধি থেকে সমাজ বেঁচে যায়। এই কারণে হুজুর (সাঃ) অবিবাহিত যুবক যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য নেয় তাদের রোজা রাখার পরামর্শ দিতেন। চোখের হেফাজতও রোজার মাধ্যমে সহজ হয়। রোজা অপ্রয়োজনীয় এবং আজে-বাজে কথা বলার খায়েশ দূর করে। স্বাভাবিকভাবেই, ক্ষুধার্ত অবস্থায় মন বেশি কথা বলতে চায় না। এর ফলে মুখের আপদ তথা মিথ্যা, গীবত, শেকায়েত, চুগলখোরী, বেহুদা কথাবার্তা, ঠাট্রা-বিদ্রুপ, ঝগড়া-বিবাদ থেকে বাঁচা যায়। রোজার মাধ্যমে যেমন আত্মিক রোগ দূর করা যায়, ঠিক তেমনই দৈহিক সুস্থতা ও রোগব্যাধি প্রতিরোধ করা যায়। রাসুলে কারীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন, উদরপূর্তি মূল রোগ, পরহেজ করা মূল ওষুধ। পেটের উদাহরণ কারখানার বয়লারের মতো। বয়লারের মধ্যে যেমন কোনো জিনিস সিদ্ধ বা রান্না করা করা হয়, ঠিক তেমনি পেটের ভেতরেও খাদদ্রব্যের পরিপাক হয়ে থাকে। বয়লারকে ভালো ও কর্মক্ষম রাখার জন্য মাঝে মাঝে বিরতি দেয়া হয় এবং খালি করে পরিষ্কার করা হয়। ঠিক তেমনই পেটকেও রোজার মাধ্যমে পরিষ্কার করা সম্ভব হয় এবং কার্যক্ষম রাখা যায়। রোজার মাধ্যমে বিনয় ও বশ্যতা অর্জিত হয়; ধৈর্যধারণের অভ্যাস পয়দা হয়; দর্প ও অহঙ্কার দূর হয় এবং মহান আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা সহজ হয়। এই কারণেই হুজুর (সাঃ) প্রায়ই রোজা রাখতেন ও ক্ষুধার্ত থাকতেন। তাই আসুন আমরা রোজার মাধ্যমে শারীরিক ও রুহানি রোগ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লার শুকরিয়া আদায়ের যোগ্যতা হাসিল করি। (লেখক: অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)।