কিডনি প্রতিস্থাপন

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকের মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। গত সোমবার ওই চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫শ কিডনি প্রতিস্থাপনের রেকর্ড উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এই ঘোষণা দেন। এর ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আরও উন্নত গবেষণাসহ মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের সামাজিক আন্দোলন যে আরও বেগবান ও শক্তিশালী হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই যে, সমাজে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ নিয়ে অদ্যাবধি নানা কুসংস্কার বিরাজ করছে। সে অবস্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রের জ্ঞানী-গুণী ও বিশিষ্টজনেরা যদি এ জাতীয় অঙ্গীকারনামা প্রদান করেন, তখন তা মানবপ্রগতি ও কল্যাণের অগ্রগতিকেই ত্বরান্বিত করে।

বিশিষ্ট চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, সার্জন ও কিডনি বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের মৃত্যুর পর একমাত্র মস্তিষ্ক ব্যতিরেকে চোখ, কিডনি, লিভার ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করা যায়। এর মাধ্যমে অর্থাৎ ক্ষেত্রবিশেষে এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নতুন জীবনদান করা সম্ভব সহজেই। উন্নত দেশের মতো বর্তমানে বাংলাদেশেও চোখের কর্নিয়া, কিডনি, লিভার ইত্যাদি প্রতিস্থাপন হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার ব্যয়ও তুলনামূলকভাবে অনেক কম বিদেশের তুলনায়। তবে দেশে সেই অনুপাতে প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায় না বললেই চলে। কেননা, প্রথমত এক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলনটি তেমন জোরালো নয়। এর পাশাপাশি নানা সংস্কারও রয়েছে। সর্বোপরি রয়েছে নানা আইনি প্রতিবন্ধকতা। কিডনি, লিভার ইত্যাদির ক্ষেত্রে তা জটিল ও ঝামেলার। সরাসরি রোগীর নিকটাত্মীয় ও স্বজন ছাড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেয়া যায় না। নিকট অতীতে এ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বেআইনি ও নীতি নৈতিকতাহীন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় তা রয়েছে প্রায় নিষেধাজ্ঞার পর্যায়ে। সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে যুগপোযোগী আইনের খসড়া প্রণয়ন করলেও তা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। অপেক্ষাকৃত সহজ হলেও চক্ষুদানও যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, এমন কথা বলা যাবে না।

তবে আইনের চেয়েও বেশি প্রয়োজন সর্বস্তরে জনসচেতনতা এবং সামাজিক আন্দোলন। মানুষকে বুঝতে হবে যে, মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হলেও সুস্থ ও নীরোগ দেহে বেঁচে থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এর জন্য প্রয়োজন নিরন্তর গবেষণা ও অনুসন্ধান। গত কয়েক বছরে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং ওষুধ শিল্পের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। এর ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে অনেক, এমনকি বাংলাদেশেও। সেজন্য মরণোত্তর দেহ, চোখ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সুস্থ দেহ সুস্থ মনে বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যক নিরন্ত্রর গবেষণা। ইতালির এক বিশ্বখ্যাত শল্য চিকিৎসক প্রফেসর সের্গিও কানাভারো তো চলতি বছরই একটা পূর্ণাঙ্গ মানুষের মস্তক প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। অনেক উন্নত দেশে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর যন্ত্রণা লাঘবে ইউথেনাসিয়া বা স্বেচ্ছা মৃত্যুবরণের আইন রয়েছে। মানুষের মঙ্গল তথা কল্যাণার্থেই তা অত্যাবশ্যক।