কিছু যুক্তি কখনো কখনো সমাজকে অসহায় করে

 

ত্যাগে বা ছাড় দিয়ে মহত্ব অনুভবে উদ্ভাসিত হওয়ার বদলে যখন বিষয়টিকে পরাজয়ের গ্লানি ভাবা হয়, তখন ভর করতে পারে জেদ। সেই জেদ ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে নিলেও কারো কারো ঘোর কাটে না। জেদ এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায় সেখানে ‘পারলো না’ কটাক্ষ অনেক বেশি কষ্টের হয়ে দাঁড়ায়। সেই কষ্ট এড়াতে গিয়ে জেদের খেসারত হিসেবে প্রাণটাও বিপন্ন ঝুঁকির কিনারায় ঝুলতে থাকে। যেমন ঝুলছে চুয়াডাঙ্গা দামড়হুদার গোবিন্দহুদা গ্রামের দু পক্ষের নেতৃত্বদানকারীদের প্রাণ। আর কতোজনের প্রাণ ঝরলে দু পক্ষের বিরোধের নিষ্পত্তি হবে? কে দেবে জবাব?

দু পক্ষের একজন পেশকার, অপরজন স্ট্যাম্পভেন্ডার। বিরোধের সূত্রপাত মূলত জমিজমা নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে দু পক্ষের বিরোধ জিইয়ে রয়েছে। হামলা পাল্টা হামলা লেগেই আছে। মামলা? তার সংখ্যাও কম নয়। সর্বশেষ একপক্ষের পাল্টা হামলায় আহত একজন মারা গেছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করানো হয়। অপরপক্ষের একজনকে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। তাকেও এমনভাবে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে যে, তিনি বাঁচলেও স্বাভাবিক চলাফেরার মতো সুস্থ কোনোদিনই হবেন না। শরীর থেকে একটি পা বিছিন্ন করা হতে পারে বলেও শঙ্কা চিকিৎসকদের। এর আগের হামলা পাল্টা হামলায় মামলা হয়েছে। বিচারও হয়েছে, হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হতে হবে। অবশ্যই সকল অপরাধেরই শাস্তি হওয়া দরকার। একই সাথে প্রয়োজন বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় খোঁজা, বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া।

ছাড় দেব কেন? অন্যায় দাবি মেনে নেয়া মানে অন্যায়কে সমর্থন করা। অতোটা বোকা নয় যে অন্যায় দাবি মেনে নেবো, এরপরই দুর্বল ভেবে আরো বড় অন্যায় দাবি করবে। কতোবার ছাড় দেব? দু পক্ষই যদি এরকম যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন খাড়া করে শুরু করে লড়াই, আর সেই লড়াইয়ের খেসারতের ফিরিস্তি দিনের পর দিন যদি বাড়তেই থাকে? তাহলে আইন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে লাভ কী? প্রশ্নগুলো দামুড়হুদার গোবিন্দহুদার দু পক্ষের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে খুবই যুক্তিযুক্ত বটে। যেকোনো বিরোধের শুরুতেই যদি সামাজিক হস্তক্ষেপে তা দ্রুত নিরসন করা যায় তা হলে জেদ ভয়ঙ্কর রূপ নেয় না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীলদের ন্যায়পক্ষ অবলম্বন অন্যায় দাবির হীনমানসিকতা দূর করে। সমাজ সুন্দর হয়। আইন প্রয়োগে প্রভাবিত হয়ে ন্যায়পক্ষ ত্যাগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিরোধকে উসকে দেয়।

দামুড়হুদার গোবিন্দহুদার দুপক্ষের বিরোধের সূত্রপাত জমি নিয়ে। জমি যতোটুকুই হোক, তা ছাড় দেয়া না দেয়া এবং কেন দেব প্রশ্নই হার-জিতের জেদ প্রকট করেছে। বিরোধের মাত্রা এখন এমন এক পর্যায়ে যা নিরসনের কথাও ভাবতে পারছে না গ্রামের সাধারণ মানুষ। তাই বলে দু পক্ষ মারামারি করবে, রক্তের পর রক্ত ঝরতেই থাকবে? এটা সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে না। বিরোধের নিষ্পত্তিতে অবশ্যই সমাজের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসতে হবে। দু পক্ষকেই জেদ থেকে সরে নিজ নিজ পক্ষের ত্রুটি শনাক্ত করে ছাড় দেয়ার মানসিকতা গড়তে হবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *