কাজির গরু যেন গোয়ালেও থাকে

স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য প্রায় অভিন্ন নিয়মনীতি রেখে পৃথক তিনটি খসড়া এমপিও নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনাপত্তির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেখানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হওয়ায় এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষায় রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চূড়ান্ত এ খসড়ায় প্রথমবারের মতো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এ বয়সের বেশি কেউ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন না।
এছাড়া শিক্ষকদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বেশি বয়সী কেউ প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান ও সাধারণ শিক্ষক হিসেবে পুনঃনিয়োগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন না। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় এসব উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। নীতিমালাটিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি, বার্ষিক কাজের মূল্যায়ন, শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা, নিয়োগের স্বচ্ছতা এবং প্রতিটি বিষয়ে একজন করে শিক্ষক রাখার বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আছে এমপিওভুক্তির জন্য চারটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের একটি গ্রেডিং পদ্ধতি এবং আঞ্চলিক সামঞ্জস্যতার বিষয়টিও।
এগুলোও ইতিবাচক, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ‘কাজির গরু কেবল কিতাবে না থেকে গোয়ালে’ও থাকবে তো! কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কড়া নিয়ম আগে থেকে থাকলেও সেগুলো ভালোভাবে পরিপালন করে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে, এমন নজির খুব কম। কোনো শিক্ষার্থী না থাকা প্রতিষ্ঠানের ‘ফাঁকিবাজ’ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক বছরের পর বছর বেতন তুলে নিচ্ছে, অথচ শিক্ষার্থী এবং সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও মিলছে না এমপিও- এমন ঘটনা অনেক। ফলে নতুন নীতিমালা জারির পর এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে। খসড়া নীতিমালাটির অন্যতম ভালো একটি দিক- প্রথমবারের মতো মাদরাসায় অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পথ খোলা রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘মাদরাসায় প্রথম-দশম শ্রেণিতে কোনো একটি ধর্মের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ বা ততোধিক হলে সেই ধর্মের জন্য একজন করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাবে।’ এর মধ্যদিয়ে যদি মাদরাসায় অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীকে পড়ানো যায় তবে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতিতে তা ভালো একটি ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমরা আশাবাদী।
খসড়া নীতিমালাটিতে শিক্ষকদের কাজের অভিজ্ঞতা, জ্যেষ্ঠতা এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগীয় হওয়া, এমপিওবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানে চাকরিসহ অনেক প্রয়োজনীয় বিষয় তুলে ধরা হলেও কোনো প্রতিষ্ঠানের কমিটি সরকারের নিয়মনীতির সাথে সাংঘর্ষিক কিছু করতে পারবে কিনা, করলে কী ধরনের সাজার মুখে পড়তে হবে, তার কিছুই উল্লেখ নেই। অথচ নিয়মনীতি ভঙের ঘটনা অহরহই ঘটছে। ফলে প্রজ্ঞাপন জারির আগেই বিষয়টিতে মনোযোগ দেয়া দরকার। দুর্ভাগ্যের বিষয়, বর্তমান সময়ে শিক্ষা উন্নয়ন-অগ্রগতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলেও শিক্ষাখাতে আমরা যেমন পিছিয়ে আছি, তেমনি দুর্নীতি-অনিয়ম, যোগ্য ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে মাসোহারার বিনিময়ে অযোগ্যকে বসানোর মতো কর্মকা- উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে।
প্রশ্ন ফাঁস, নকল, ফল জালিয়াতি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় এমপিও নীতিমালায় ফাঁকফোকর বন্ধসহ শিক্ষা খাতের সব ক্ষেত্রে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।