ওদের অপমৃত্যুকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ আছে?

 

গরমের সময় তীব্র গরম, শীতের সময় তীব্র শীত। শীত ও গরম না হয় চুয়াডাঙ্গাবাসীর ভাগ্যে জুটেছে ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে। চুয়াডাঙ্গার মানুষ সহিংসতায় মরলে তার নাম ক্ষতিপূরণের তালিকায় না ওঠানোর কারণ কী? অবহেলা নাকি নাম তুলতে না পারার অক্ষমতা? তালিকা প্রস্তুতকারক কর্তাদের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বঞ্চিত হোক তা কাম্য নয়।

রাজনৈতিক অস্থিরতায় কাতর ছিলো সারাদেশ। একপক্ষ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে নির্বাচনে নামলো, অপরপক্ষ বর্জন করে ঘোষণা করলো লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি। রাজনৈতিক হিংসার আগুন ছড়িয়েছে রাজপথে, গ্রামবাংলায়। সহিংসতায় যতোজন অঙ্গার হয়েছেন তার অধিকাংশই বাস-ট্রাকের চালক ও তার সাধারণ যাত্রী। যারা চলে গেছেন তাদের পরিবার যে ক্ষতির শিকার হয়েছে তা কোনোভাবেই পোশানো সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরবে। সেই স্বস্তি দিতেই মূলত সরকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত শনিবার দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতায় নিহত ৫১ গাড়িচালকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার, তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। অথচ চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা এলাকা থেকে সবজি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে মানিকগঞ্জে হিংসার আগুনে নিহত ট্রাকচালক ও সহকারী চালকের নাম ওই তালিকায় নেই। গত ২ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জে পেট্রোল বোমার শিকার হয়ে এরা প্রাণ হারান। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, এদের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া এলাকায়। এদের নাম ওই তালিকাভুক্ত না হলে তাদের পরিবার সরকারি আর্থিক সহযোগিতা পাবে না। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, সহিংসতায় নিহত ৫১ গাড়িচালকের নাম তালিকাভুক্ত হলো অথচ আন্দুলবাড়িয়ার দুজনের নাম তাতে ঠাঁই পেলো না কেন? পুলিশি রেকর্ড নেই? থাকলো না কেন? নাকি রাজনৈতিক হিংসার ডামাডোলে ওরা খুন হলো? তাহলে কি চুয়াডাঙ্গার বলে ওদের অপমৃত্যুকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ আছে?

অবশ্যই চুয়াডাঙ্গা দেশের অবিছিন্ন অংশ। অবরোধের মধ্যে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেই শুধু ছিলো না, বড় বড় শহরে হাহাকার দেখা দেয়। সরকার নানাভাবে নিরাপত্তাদানের প্রতিশ্রুতিও দেয়। এরপরও প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। শুধু চুয়াডাঙ্গার নয়, দেশের সকল এলাকার সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারই সরকারি সহায়তা পাওয়ার দাবি রাখে।