উপজেলা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

 

চুন খেয়ে মুখ পুড়ে গেলে দই দেখলেও নাকি ভয় হয়, তেমনি অবস্থা হয়েছে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে। ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ৫৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হতে হয়েছে অনেক শিক্ষককে, প্রাণও দিতে হয়েছে। তার রেশ কাটতে না কাটতেই এসে যাচ্ছে আরেকটি নির্বাচন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী মাসে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে ১২০টি, মার্চে ২২৩টি, এপ্রিলে ৩৫টি, মে মাসে ৮৫টি ও জুনে ১৮টি উপজেলার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। বাকিগুলোর মেয়াদও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। বিধি মোতাবেক মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সেই হিসেবে ১২০টি উপজেলার নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যেই হতে হবে। অথচ ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এপ্রিলের প্রথম সপ্তা থেকেই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আর এখন তো নির্বাচন মানেই হচ্ছে সহিংসতা। এখন দেশে যে রকম রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, তাতে সহিংসতার পরিমাণ বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন অনেকে। এ অবস্থায় উপজেলা নির্বাচনের আগেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লক্ষণীয় উন্নতি করা প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে নির্বাচনকেন্দ্র হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিকল্পের কথা ভাবতে হবে।

উপজেলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য অঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও গত পাঁচ বছর উপজেলা পরিষদকে খুব একটা কার্যকর ভূমিকায় দেখা যায়নি। উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব করে রাখা হয়েছিলো। তাই শুধু ঘটা করে নির্বাচন করলেই হবে না, উপজেলা পরিষদকে কার্যকর ও ক্ষমতাসম্পন্ন করতে হবে। আর এজন্য আইন সংশোধনের দরকার। আমরা আশা করি, নির্বাচনের আগেই আইন সংশোধনের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের হাতে যথাযথ ক্ষমতা ন্যস্ত করা হবে।

উপজেলা পরিষদের নির্বাচন যদিও রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত হয় না, তবু এই নির্বাচনে রাজনীতির যথেষ্ট প্রভাব থাকে এবং প্রার্থীরা অনেকটা দলীয় প্রার্থী হিসেবেই বিবেচিত হন। প্রতিযোগিতাও সেভাবেই হয়। বিএনপিসহ সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষেই চিন্তা-ভাবনা করছে। এটি একটি ভালো দিক। এতে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়ায় যে সংঘাতের আশঙ্কা থাকে, তা হয়তো থাকবে না। কিন্তু একই সাথে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে নাজুক অবস্থা, তা থেকে উত্তরণ না ঘটাতে পারলে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় চলে যেতে পারে। আমরা আশা করি, সরকার ও নির্বাচন কমিশন বিষয়গুলো যথাযথ বিবেচনায় রাখবে।