আমরা এখনও কোন তিমিরে ভাবতেই গা শিউরে ওঠে

 

ডায়রিয়া নাকি কলেরা? যাই হোক, চিকিৎসায় ত্রুটি হলেই পানিশূন্যতায় মৃত্যু অনিবার্য। চুয়াডাঙ্গায় সপ্তাজুড়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ অব্যাহত রয়েছে। প্রথম দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কয়েকটি মহল্লায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দিন দিন তা ছড়িয়ে পড়ছে পৌরসভার অন্য এলাকাসহ চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতেও। কেন ডায়রিয়া-কলেরার প্রাদুর্ভাব? কেন ভয়াবহ প্রকোপ?

ডায়রিয়া ছোঁয়াচে নয়। পানি বা খাবারের মাধ্যমেই পাকস্থলিতে প্রবেশ করে জীবাণু। সে কারণেই বিশুদ্ধ পানি পান ও বাসি-পচা খাবার পরিহারের পুনঃ পুনঃ আহ্বান জানানো হয়। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় ব্যাপকহারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ায় পৌর সরবরাহকৃত পানি পান না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। মহল্লায় মহল্লায় বিশুদ্ধ পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। ডায়রিয়ার কারণ শনাক্তের জন্য ঢাকার একাধিক মেডিকেল টিম চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছেছে। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যেই রোগীর মলসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার পানি পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগারে প্রেরণ করেছে। গণহারে ডায়রিয়া আক্রান্ত নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়লেও জনস্বাস্থ্য বিভাগের অবশ্য অতোটা তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। বিজিবি সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। খাবার স্যালাইনও বিতরণ করছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালটির ১শ শয্যার অবকাঠামো এখনও নির্মাণাধীন। ফলে স্থানসংকুলানের কথা ভেবে ৬ বিজিবি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কয়েকটি তাঁবুও গেঁড়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে সকল প্রকারের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। পৌর কর্তৃপক্ষ পৌর সরবরাহকৃত পানি পান না করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে বা ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করার আহ্বান জানিয়েছে। এতো সব আয়োজনের মাঝে চিকিৎসার বেহাল ছবি ক’দিন ধরেই অভিন্ন রয়েছে। কেনো, লোকবল সংকট। এ কারণে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ দফতরের প্রতিনিধি দলের পরামর্শে চুয়াডাঙ্গার উপজেলা পর্যায়ের সকল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুজন সেবিকা রেখে বাকিদের সদর হাসপাতালে নিয়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত করার প্রক্রিয়া করা হয়েছে। ঝিনাইদহ থেকে দুটি মেডিকেল টিম নেয়া হয়েছে। দুদিন আগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের স্টোরকিপার ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধপথ্য মজুদ রয়েছে বলে জানালেও তিন দিনের মাথায় মেহেরপুর থেকে ধার করতে হয়েছে। চাহিদা দেয়ার সাথে সাথে খুলনা থেকে ৮ হাজার স্যালাইনও সরবরাহ করা হয়েছে। এরপরও কি রোগীরা সঠিকভাবে সুচিকিৎসা পাচ্ছে? কীভাবে পাবে? যেখানে মাত্র ২৬ জন রোগীর চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা সেখানে ৫শর অধিক রোগী। কোনোভাবেই কি সম্ভব? অসম্ভবকে সম্ভব করেছে বলেই তো চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগকে ঢাকার পরিদর্শন টিম ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে, এটি একটা উদাহরণ বটে। যদিও এ তৃপ্তি স্বস্তির বদলে তপ্তই করে। গণহারে ডায়রিয়া-কলেরা আক্রান্ত, রোগী ও রোগীর লোকজনের ঠাসাঠাসি কাম্য নয়। দ্রুত প্রতিরোধই স্বস্তির মূল দাওয়ায়।

ডায়রিয়া-কলেরা যেহেতু চুয়াডাঙ্গা পৌর পানি সরবরাহ এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, সেহেতু এ রোগের প্রাদুর্ভাবের মূল কারণ দ্রুত শনাক্ত করা প্রয়োজন। সমস্যার উৎস শনাক্ত করতে না পারলে সমস্যা বেসামাল হওয়াটাই স্বাভাবিক। আধুনিক বিজ্ঞান যুগেও যদি এতো সময় লাগে রোগের কারণ শনাক্ত করতে তা হলে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ কোন তিমিরে তা নতুন করে বলার কি অবকাশ রাখে?