আইন প্রয়োগে উদাসীনতা অনিয়মকে উসকে দেয়

আর কতোটা প্রাণ ঝরলে শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে? দেশের সব মায়ের বুক খালি হলেও যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীলদের টনক নড়বে না তা অবস্থাদৃষ্টে সহজেই অনুমান করা যায়। একেতো অবৈধযান, তার ওপর অদক্ষ চালক। অবৈধযান আর অদক্ষ চালকের কারণেই সড়ক হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী। ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা? আমাদের সমাজে সে কথা ভাবাটাও যেন অন্যায়। যে সমাজে অনিয়ম অন্যায়ই নিয়ম হয়ে দাঁড়ায় সেখানে সড়কের নিরাপত্তার কথা ভাবাটা কি অবান্তর নয়?

অবশ্যই অবৈধযান এলাকার অসংখ্য পরিবারে সচ্ছলতা এনেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ কৃষি উৎপাদিত পণ্য পরিবহনও সহজতর করেছে। এসব সুবিধার বিপরীতে? বহু পরিবারে নেমে এসেছে পঙ্গুত্বের অভিশাপ। অসংখ্য পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম পুরুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বহু মায়ের বুক খালি করেছে। এসব কি ওই সচ্ছলতা এবং পরিবহন ব্যবস্থা সহজতর করা দানবরূপী অবৈধযানকে ঘৃণার আসনে বসায় না? সড়ক থেকে উচ্ছেদের দাবি জোরদার করে না? যে হারে দুর্ঘটনা ঘটছে, যেভাবে একের পর এক প্রাণ ঝরছে, অঙ্গহানি হচ্ছে, সমাজে বাড়ছে পঙ্গুত্বের বোঝা তা অব্যাহত থাকলে এ জাতির দারিদ্র্য বিমোচন কোনোদিনও কি বাস্তবে রূপদান সম্ভব? ভেবে দেখবেন ধর্মাবতার।

অবশ্যই অবৈধযান একদিনে ব্যাপকতায় পৌঁছায়নি। ধীরে ধীরে বেড়েছে, বাড়ছে। সড়কে বৈধযানের ক্ষেত্রে আইনের বাধ্যবাধকতা যতোটা, অতোটা না হলেও অন্তত অবৈধযানে দুর্ঘটনা ঘটলে চালককে আইনের আওতায় নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা হলে দুর্ঘটনা যে হ্রাস পাবে তা বলাই বাহুল্য। বৈধযানের ক্ষেত্রে আইনের বাধ্যবাধকতা অথচ অবৈধযানের ক্ষেত্রে উদাসীনতা কেন? উপরি আয় নাকি বিশেষ দয়া? আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীলদের কি ওরকম দয়াবান হওয়া সাজে? দেশের সাধারণ মানুষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিশ্চয় দয়া করার জন্যই আরাম কেদারায় বসায়নি। রাজনৈতিক তদবির? অজুহাত নয়, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করাটাই মূল দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব থেকে সরে আসা মানে অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয়া। আর তারই কারণে সড়ক হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী। একের পর এক তরতাজা প্রাণ ঝরছে। যে যাচ্ছে সে তো যাচ্ছেই, যার অঙ্গহানি ঘটছে, পঙ্গুত্বের অভিশপ্ত জীবন তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ চায় সমাজ।

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ঝিনাইদহসহ বৃহত্তর কুষ্টিয়ার ছোটবড় সড়কগুলোতে অবৈধযানের ছড়াছড়ি। শ্যালোইঞ্জিনচালিত হরেক নামের এসব যানের বৈধতা সরকার দেয়নি। প্রায় বছরখানেক আগে যোগাযোগমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গা সফরকালে স্পষ্ট ভাষায় প্রশাসনকে জানিয়ে দেন, সড়কে অবৈধযান চলবে না। অবৈধযান তৈরির কারখানা থাকবে না। যোগাযোগমন্ত্রীর সেই নির্দেশনা চুয়াডাঙ্গায় তখন থেকেই থোড়াই কেয়ার হয়ে আসছে। একটি কারখানাও উচ্ছেদ হয়নি, সড়ক থেকে অবৈধযান উচ্ছেদ দূরাস্ত, বরঞ্চ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এসব অবৈধযান যে হারে প্রাণ কাড়ছে তাকে গণহত্যা বললে নিশ্চয় ভুল হবে না। পত্রিকার পাতায় চোখ রাখলেই অবৈধযান দুর্ঘটনায় প্রাণহানির খবর দৃষ্টি কাড়ে। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় করিমন দুর্ঘটনায় পথচারী শিশুর প্রাণহানির খবর গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়। এসব নিশ্চয় দায়িত্বশীল কর্তাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। মামলা কি হয়েছে? না হলে কেন হলো না? আইন প্রয়োগে উদাসীনতা অনিয়মকে উসকে দেয়।

অবরোধের মধ্যে অবৈধযানই সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু এসব অবৈধযানের চালকদের নিকট থেকে বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে যাদের নামে টাকা তোলা হচ্ছে তাদের কর্তারা কি সত্যিই তার হিস্যা পান? লজ্জার বটে। অবৈধযান উচ্ছেদ করে বিকল্প বৈধযান ন্যায্যমূল্যে সরবরাহের পাশাপাশি তা চালনায় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি জরুরি। সড়ক নিরাপদ করতে আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিকল্প নেই। শুধু অবৈধ নয়, বৈধযানের ক্ষেত্রেও যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।