আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করতে আশু পদক্ষেপ জরুরি

 

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা জনপদে আইনশৃঙ্খলা যে স্বাভাবিক নেই, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিতরা অস্বীকার করবেন কীভাবে? গণহারে চাঁদাদাবি, চাঁদা না পেয়ে ইটভাটায় সশস্ত্র হানা, একের পর এক বোমা হামলার পাশাপাশি ডাকাতি লেগেই আছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে দামুড়হুদার গোবিন্দপুর গ্রামে মুখোশপরা অস্ত্রধারীরা ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা মারধর করেছে, বোমা মেরেছে। সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই কুপিয়েছে। কেন? ডাকাতির জন্য গ্রামে প্রবেশের পর প্রতিরোধের মুখে তাণ্ডব? নাকি ভীতসন্ত্রস্ত করতেই মুখোশধারীদের এমন নৃশংসতা?

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা এক সময় সন্ত্রাসকবলিত হিসেবে চিহ্নিত ছিলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের অনমনীয় লাগাতার অভিযানে এলাকার বাঘা বাঘা অধিকাংশ অস্ত্রধারীর পতনে অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। স্বস্তি মেলে। সেই স্বস্তি যে স্থায়ী হয়নি তা বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে স্পষ্ট। এলাকায় একাধিক গ্যাং গ্রুপ গড়ে উঠেছে। মোবামাইলফোনে চাঁদাদাবি, অপহরণের পর মুক্তিপণ বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়সহ ব্যাপকহারে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে মেতেছে এলাকার অপরাধীচক্র। এদের মূলত অস্ত্র এখন বোমা আর মোবাইলফোন। বোমার বারুদ প্রতিবেশী দেশ থেকে পাচার করে আনা হলেও বোমা তৈরি করে অপরাধচক্রেরই সদস্যরা। মোবাইলফোনের অপব্যবহার রোধে রেজিস্ট্রেশনসহ নানামুখি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ব্যবহারকারীর অবস্থান শনাক্ত করার মতো প্রযুক্তিও স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে। এরপরও মোবাইলফোনে চাঁদাবাজি, হুমকিদাতাদের ধরে আইনে সোপর্দ করার সক্ষমতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীলেরা দেখাতে পারছেন না। অপরাধী ধরতে শুধু পুলিশি তৎপরতা দেখালেই হয় না, গোপন সংবাদদাতা নিয়োগ এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। একের পর এক অপরাধমূলক অপকর্ম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ব্যর্থতারই যে বহির্প্রকাশ তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। যদিও অপ্রতুলতা অস্বীকার করা যায় না।

আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টার পাশাপাশি এলাকাবাসীরও দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন। এলাকার সাধারণ মানুষ সেই সহযোগিতার সাহস হারায় যখন অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা জনপদের সাধারণ মানুষ যে সেই সাহস হারিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। উন্নয়নশীল দেশে সন্ত্রাস নির্মূল অসম্ভব হলেও দমন সম্ভব। সেই সম্ভবনায় চিড় ধরে যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিতদের কর্তব্য অবহেলা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বেড়ে যায়। দামুড়হুদার জনপদের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী কে? আশু পদক্ষেপ জরুরি।