অসতর্কতায় ভয়াবহ পরিণামেও আলিস্যে কাটেনা আমাদের

 

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে চলেছে। জীবনহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে। বেশির ভাগ অগ্নিকাণ্ড ঘটছে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে। ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক উপকরণ ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণে অসচেতনতাসহ অবহেলা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনছে। গতপরশু চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা এলাকার হতদরিদ্রদের আবাসনে ভয়াবহ আগ্নিকাণ্ডে ১২টি পরিবারের সর্বশ্বস গ্রাস করেছে। এছাড়াও ঝিনাইদহের মহেশরপুর, মেহেরপুরের গাংনী এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের খবর গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় যথাযথ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ড ও তার ভয়াবহতায় ক্ষয়ক্ষতির খবর গুরুত্ব দেয়ার মূল কারণ, অন্যদেরও সতর্ক করা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর গড়ে অন্তত ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। গত আট বছরে সারাদেশে এক লাখ ৩০ হাজার ২১৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন এক হাজার ৯২৮ জন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৮২৫ জন। ক্ষতির পরিমাণ সোয়া চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে ঘটছে। দেশের অগ্নিকাণ্ডের এ পরিসংখ্যানে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহও অন্তর্ভুক্ত।

অগ্নিকাণ্ড কখন ঘটবে সে বিষয়টি অনুমান করার উপায় না থাকলেও সচেতন হলে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। এজন্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের সময় তার মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। বাড়িঘর কলকারখানায় অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোথাও আগুন লাগলে সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিসকে জানালেও প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব। ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির কারণে বড় অগ্নিকাণ্ড সবার দৃষ্টি কাড়লেও প্রকৃতপক্ষে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আগুনের ঘটনা ঘটছে। বৈদ্যুতিক ত্রুটির পাশাপাশি সিগারেটের আগুন, গ্যাসের চুলা, গ্যাস সিলিন্ডার, রাসায়নিক দ্রব্য, বিস্ফোরণ, আগুন নিয়ে খেলা ও অসতর্কতাসহ নানা কারণে ঘটছে প্রলয়ঙ্করী অগ্নিকাণ্ড।

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার হতদরিদ্র পরিবারের আবাসনে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের এক কর্মকর্তা। সঙ্গত কারণেই কিছু প্রশ্ন, উত্থাপিত হয়, পল্লি বিদ্যুত সমিতি যেসব এলাকায় বিদ্যুতায়িত করে, যেখানে বিদ্যুত সংযোগ দেয় সেখানে সমিতির নানা শর্ত মানতে হয়। সেই শর্তে কি ফাঁক ছিলো নাকি, দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তির উদাসীনতা অনিবার্য করে তুলেছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড? সঙ্গত প্রশ্ন।

নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, আমাদের দেশে দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি খুবই অপ্রতুল। শহরের মহল্লাগুলার অধিকাংশই এতোটাই ঘনবসতিপূর্ণ যে, ঘরের সাথে ঘর লাগানো। অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের লালগাড়ি চলাচলের সুযোগ নেই। তাছাড়া পানি? শহরে অগ্নি নির্বাপণের জন্য মহল্লাভিত্তিক পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা দূরের কথা, এখন গ্রামেও তা মিলছে না। নদ-নদী, খাল-বিল পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। পানি তুলে সেচ দেয়ার কারণে ভুগর্ভের পানিস্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে খাল-বিল পুকুরে পানি ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। পানি না থাকার কারণে কার্পাসডাঙ্গা আরামডাঙ্গার অধিকাংশ হতদরিদ্র পরিবারের সহায় সম্বল রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

পুনশ্চ: অসতর্কতায় ভয়াবহ পরিণামেও আলিস্যে কাটেনা আমাদের।