অশোভন মন্তব্য কিছুতেই কাম্য নয়

 

বিএনপির গণসমাবেশে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দশম জাতীয় সংসদের সদস্যদের ‘সং’ বলে পরিহাস করেন। তার ভাষায়, এ সংসদে কতগুলো সং বসে থাকবে, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে এ ধরনের অমার্জিত মন্তব্য দেশের কোনো দায়িত্বশীল নেতার নিকট হতে প্রত্যাশিত হতে পারে না। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বিএনপির এ সমাবেশ থেকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য আসবে এটাই ছিলো সকলের কাম্য। বিশেষত গত কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় এবং সকলের কল্যাণে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা আশা করা হয়েছিলো। কিন্তু সরকারের সহযোগিতায় সেই সমাবেশ সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হলেও বিএনপি চেয়ারপারসনের এ ধরনের কটু ও সুবিবেচনাবর্জিত বক্তব্যে হতাশাবোধ না করে পারা যায় না। তার তো এটাও ভুলে যাওয়ার কথা নয় যে, তিনি নিজেও একাধিকবার সংসদ নেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাজনীতিতে মত ও দ্বিমত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে রাজনীতিবিদদের মধ্যে ন্যূনতম পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকবে না তা কি হতে পারে? অভিধান ঘেটে দেখা যায়, ‘সং’ অর্থ অদ্ভুত পোশাকধারী হাস্যকৌতুককারী অভিনেতা বা বিনোদনকারী। কিন্তু ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর আলাদা একটি নেতিবাচক ভাব-ব্যঞ্জনা রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। বর্তমান জাতীয় সংসদে এমন অনেক সদস্য আছেন যারা অতীতেও নিজেদের আসনে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। পালন করেছেন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দায়িত্ব। তারা জনগণের পরীক্ষিত নেতা। তাছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যতোই সমালোচনা করা হোক, একে ‘অবৈধ’ বলার কোনোই অবকাশ নেই। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এ নির্বাচন। কিন্তু কেউ নির্বাচনে আসেনি বলে এটা অবৈধ হয়ে যায় না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও অনেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, অন্যান্য সাধারণ নির্বাচনেও কমবেশি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার নজির আছে। কিন্তু সেই সংসদের কাউকেও ‘সং’ বলে পরিহাস করা হয়েছে এমন কোনো নজির নেই।

৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিলো ১৮ দলীয় জোট। কিন্তু শেষপর্যন্ত এ নির্বাচন ঠেকানো যায়নি। এটাই সত্য ও বাস্তবতা। নির্বাচনের পর সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নূতন সরকারকে অবৈধ আখ্যা দেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ওই জনসভায় সংসদ সদস্যদের ‘সং’ বলে তিনি আবারও প্রশ্নের মুখে পড়লেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত অনুরূপ এক নির্বাচনে তিনি নিজেও নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আজ দশম সংসদের সদস্যগণ যদি তার ভাষায় ‘সং’ হয়ে যান, তাহলে তিনিও কি সেই দলে পড়ে যান না? তার মতো অভিজ্ঞ নেতার নিকট থেকে এ ধরনের অশোভন মন্তব্য কিছুতেই কাম্য নয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *