অগ্রযাত্রাও অদূরদর্শিতায় হয়ে উঠেছে গলার কাটা

 

চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর সড়ক শুধু অবৈধযানের কারণে মৃত্যুপুরী হয়নি, দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধির জন্য বৈধযানের অবৈধ অবাধ চলাচলও বহুলাংশে দায়ী। মোটকথা- বৈধ-অবৈধের ভিড়ে আমজনতা বড্ড অসহায়। আইন প্রয়োগে দীর্ঘদিনের চরম উদাসীনতা আর আমদানি নীতিতে দুর্নীতির সুযোগ তথা পদ্ধতিগত ত্রুটি সড়কগুলোকে দানবীয় করে তুলেছে। খেসারত দিতে হচ্ছে সমাজকে। তাই-ই হয়-যদি সমাজ পরিচালনায় থাকে অদূরদর্শিতা।

একথা নতুন করে বলার অবকাশ নেই যে, আমাদের জনপদে এখন অনাহারি খুঁজে পাওয়া ভার। আর্থসামাজিক উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য অতোটা না মিললেও ঊর্বরা ভূমি আর হাড়ভাঙা খাটুনি ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সহায়ক হয়েছে। মাটির ঘর বিদায় নিয়েছে, গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে দালান-কোঠা তথা কংক্রিটের বনবাদাড়। গ্রামের রাস্তাই শুধু নয়, মেঠোপথটাও ইটপাড়া পিচঢালা করা হয়েছে, হচ্ছে। গরুর গাড়ি কালের গহ্বরে বিলীন। এসব অবশ্যই অগ্রযাত্রা। যদিও অদূরদর্শিতায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রযাত্রাও অনেক সময় অসহায় করে তোলে। সড়কে মৃত্যুমিছিল, ঘরে ঘরে পঙ্গু মানুষ বাড়ছে, পঙ্গুত্বের বোঝা অসংখ্য পরিবারকে অসহায় করে তুলেছে। সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে না পারার কারণেই অসহায়ত্ব বাড়ছে ঘরে ঘরে। অথচ দেশে আইন আছে, আইন প্রয়োগে লোকবল রয়েছে। আমজনতার অর্থে তাদের মাসে মাসে বেতনও দেয়া হয়। ঈদে উঠতি বয়সী অনেকেই মোটরবাইক চালায় সাপের মতো বেকিয়ে, বেঘোরে ওরাও যে বেকায়দায় পড়ে পঙ্গু হচ্ছে না তা নয়। শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযান বড় বড় সড়কে বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে দুর্ঘটনার হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি তুলনামূলক কম হলেও গুরুতর জখম হওয়ার সংখ্যা বহু। দিনের তুলনায় রাতে দুর্ঘনা বহুলাংশে বেড়েছে। কারণ হেডলাইটের যাচ্ছে তাই ব্যবহার। বিপরীত দিকের কোনো করিমন বা মোটরবাইকের আলো বৈধ যানগুলোর চালকদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হামলে পড়ে। তাহলে ওই ধরনের চোখ ধাঁধানো লাইটযুক্ত মোটরবাইক আমদানি করা হলো কেন? পাখিভ্যানে শাদা যে লাইট জুড়ে দেয়া হচ্ছে তা কতোটা ভয়ানক তা কর্তাবাবুরা কি ভেবে দেখেছেন? এরকম বহু প্রশ্নের জবাব মেলে না।

অবশ্যই সড়ক নিরাপদ করতে হবে। সড়কে বের হয়ে সুহালে গন্তব্যে পৌছুনো বা বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। যদিও দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তার বড্ড অভাব। যেনতেনভাবে দিন পার করার রেওয়াজ জাতিকে পতনের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। ফলে যে যেখানে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের সকলকেই একটু জেগে উঠতে হবে। ঘুরে দাঁড়িয়ে আইন প্রয়োগে আন্তরিক হাওয়ার তাগিদ উপলব্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আগামী দিনকে সুন্দর করতে হলে আজকের দিনটাকেই কাজে লাগাতে হবে।