হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন খেলা-ধুলা

বর্তমান প্রজন্ম ঝুকে পড়েছে কম্পিউটার মোবাইল গেমসসহ আধুনিক প্রযুক্তির দিকে

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ড: টেক-টাক, টেক-টাক অথবা, কিত-কিত, কিত-কিত ধ্বনি তুলে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য খেলা এখন আর চোখে পড়েনা। এ যুগের ছেলে-মেয়েরা পিতা-মাতার কাছে লোহার বায়লা কিংবা ঘুড়ি কেনার বায়না ধরে না। কাঁদতে দেখা যায় না লাটিম অথবা গুলতির জন্য। দুরন্ত রাখালকে চৈত্রের কাঠফাটা রোদে খেলতে দেখা যায়না ডাংগুলি, ঘুড়ি উড়ানো কিংবা খেটে খেলাসহ বিভিন্ন রকমের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র। চাপা পড়ে গেছে জাতীয় খেলা হা-ডু-ডুসহ গ্রামাঞ্চলের আদিকালের নানা রকমের খেলা। বর্তমান প্রজন্ম এখন গ্রামীণ খেলার সাথে একেবারেই অপরিচিত। একযুগ আগেও শহর অথবা গ্রামাঞ্চলের শিশু-কিশোররা স্কুল ছুটির ফাঁকে কিংবা বিকেল হলেই মেতে উঠতো নানা ধরনের খেলাধুলায়। সেসব খেলা এখন আর খেলতে দেখা যায় এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্তমানে তারা ঝুঁকে পড়েছে কম্পিউটার, মোবাইলগেমস, ক্রিকেটসহ আধুনিক সব খেলার দিকে। গ্রাম-বাংলার অসংখ্য খেলার মধ্যে ছিলো হা-ডু-ডু, ফুটবল, কানামাছি ভো-ভো, গাদি, ডাংগুলি, চিকে, কিত-কিত, খেটে, বায়লা, লাটিম, ঘুড়ি উড়ানো, খাপড়া, কাঁচের গুলি, একে ইন্দুর, গোল্লা ছুট, গুলতি, পিপুলটি গুলি, লুকোচুরি, বউ চি, চোর-ডাকাত-পুলিশ, চোক পালান্তি, হাড়িভাঙ্গা, নাকড়ি খেলা, লাঠি খেলা, কইডাঙ, দড়ি ঝাপ, হেড়ে-ফেড়ে ডাঙ, নদী-পুকুরে ঝাপুড়ি, ভাটাম, পাঁচ গুটি, কলাপতি, বউ-জামাই, কাদা ছোড়াছুড়ি, কপালে টিপ দিয়ে যা, পুতুল খেলা, পুতুলের বিয়ে, হাউই, বেলুন, পিছল, গুলির শাল, গাছের ডালে দোলনা ইত্যাদি গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যে লালিত অসংখ্য খেলাধুলা। বিকেল হলেই মেয়েদের দেখা যেতো নানা রকমের মেয়েলি খেলা খেলতে। আকাশ কালো হয়ে উঠলেই বৃষ্টির আভাস পেয়ে দুরন্ত কিশোররা বৃষ্টিভেজা উৎসবে মেতে উঠতো। রাস্তার ওপর, একটু ফাঁকাজমি কিংবা খেলার মাঠে ছুটতো ফুটবল নিয়ে। আধুনিকতার চরম উৎকর্ষে আজকের প্রজন্ম সেইসব ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার সাথে একেবারেই অপরিচিত। এখন বিকেল হলেই দেখা যায় না মাঠে মাঠে ঘুড়ি উড়াতে অথবা গ্রামের আনাচে-কানাচে গ্রামীণ সেসব খেলায় মেতে উঠতে। একদিন হয়তো ওইসব খেলাধুলা রূপকথায় পরিণত হবে আগামী প্রজন্মের কাছে।