হাওয়ায় ওড়ানো চিনির সুতো ধরেই হয় হাওয়ায়মিঠাই

দিনবদলের বাতাসে বদলে গেছে ফেরিওয়ালাদেরও ধরন-বরণ

স্টাফ রিপোর্টার: আগুনের আঁচে চিনিও বাতাসে রূপান্তর হয়। বাতাসে ওড়া ওই চিনির সুতো সুদক্ষ হাতে লাঠিতে জড়িয়ে কিংবা হাতের তালুতে ধরে তৈরি করা হয় গোলাকৃতিটাকেই বলা হয়, হাওয়াইমিঠাই। এ মিঠাই একসময় বাড়ি বসে তৈরি করে গ্রামে গ্রামে কিংবা বিদ্যালয়ের রাস্তায় ফেরি করতেন ফেরিওয়ালা। এখন? চিনি উড়োনো চুলাটাই ঘাড়ে নিয়ে ঘোরেন হাওয়াইমিঠাই বিক্রেতারা। এদেরই একজন সেলিম। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের হকপাড়ার বাসিন্দা।
কবে কখন কোন বিদ্যালয়ের সামনে কিংবা কোন মহল্লার মোড়ে দাঁড়িয়ে হাওয়াইমিঠাই তৈরি করে বিক্রি করবেন তা আগে থেকে কোনোদিনই ঠিক করে রাখেন না সেলিম। তবে প্রতিদিনেরই টার্গেট থাকে কমপক্ষে ৫শ টাকা বিক্রি। কোনোদিন হয়, কোনোদিন হয় না। যেদিন পাঁচশ টাকা বিক্রি হয়, সেদিন মাছ কিংবা মুরগি কিনে হাসিমুখেই বাড়ি ফেরেন তিনি। ৫শ’র কম বিক্রি হলে চাল-ডাল-নুন কিনে অবশিষ্ট টাকায় আন্ডাটাই জোটে কপালে। গত বুধবার চুয়াডাঙ্গা নূরনগর-জাফরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনের বুড়ো বটগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে সেলিম যখন হরদম লাঠিতে পাকাচ্ছিলেন হাওয়ায় ওড়া চিনির সুতো, তখন পাশে দাঁড়িয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের ভিড়। হাওয়াইমিঠাই কি দিয়ে তৈরি করা হয়? চিনি আর জাফলং। সেলিমের তৈরি করা হাওয়াইমিঠাইয়ে অবশ্য জাফলঙের লেশমাত্র পাওয়া যায়নি, ক্ষতিকারক রং মাখানো চিনি দিয়েই হরদম তৈরি করছিলেন তিনি হাওয়াইমিঠাই।
একসময় হাওয়াইমিঠাই ১ টাকায় মিলতো ১২টা। তখন তা থাকতো কাঁচ আর টিনের তৈরি ঢমে। ফেরিওয়ালার হাতে থাকতো ঘণ্টা কিংবা ডুগডুগি। এসব বাজিয়ে শিশু কিশোরদের বার্তা দিতেন তারা। এখনও সেই অভিন্ন কৌশলটা থাকলেও টিনের ঢম ছুড়ে ফেলা হয়েছে দূরে। ঘাড়ে করে পুরো মেশিনটাই নিয়ে ঘোরেন ফেরিওয়ালা। মেশিন বলতে কেরোসিনের বড় ল্যাম্প বা প্রদীপ। তার ওপর রাখা একটি চোঙ। যাতে রাখা হয় চিনি। ওই চোঙে তাপ দিতেই চিনি গলে বাষ্পীয় রূপ নেয়। পাশের একটি হুইল দিয়ে তা ঘুরিয়ে চিনির ওই বাষ্প উড়িয়ে দিচ্ছেন চমৎকারভাবে। আর সেটাই ধরছেন কাঠিতে বা হাতের তালুতে। সেটাই হাওয়াইমিঠাই। এখন কাঠিতে জড়ানো হাওয়াইমিঠাই টাকায় দশটাতো দূরের কথা, ১ টাকাতেও একটা হয় না। হাওয়াইমিঠাই মানেই গুনতে হচ্ছে ৫ টাকা। একটি হাওয়াইমিঠাই যখন পাঁচ টাকা, এক কাপ চায়ের দামও দশ টাকা ছুঁই ছুঁই। তখন দৈনিক মাথাভাঙ্গার মূল্য? এ প্রশ্ন তুলতেই উপস্থিতি শিশু-কিশোরদের হাসি আর দেখে কে! মিঠাইওয়ালা? তারও মুখ হয়ে উঠলো লাল।