ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পৌরসভায় অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ চেয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পৌরসভার প্যানেল মেয়র খায়রুল ইসলামসহ ১০ জন কাউন্সিলর স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগটি বিভিন্ন দফতরে দায়ের করেন।
প্রাপ্ত লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ৭ পদের জন্য অতি গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। মাসিক সভায় অনুমোদনের বিধান থাকলেও মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু তা করেননি। এছাড়া নিয়োগের ছাড়পত্র আনতে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বকেয়া থাকা সত্বেও বেতন ভাতা পরিশোধের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে স্থানীয় সরকার শাখায় পাঠানো হয়েছে। এমনকি প্রত্যয়ন প্রত্রে পৌর সচিবের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। মনগড়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে ৭ পদে নিয়োগের ছাড়পত্র সংগ্রহ করেন মেয়র।
কাউন্সিলররা লিখিত অভিযোগে আরও জানান, পৌর মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু অবৈধ নসিমন আলমসাধু ইজিবাইক থেকে টোল আদায়ের ৪৫ হাজার টাকা প্রতি মাসে পৌরসভায় জমা না দিয়ে নিজেই পকেটস্থ করছেন। পৌর রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি আছে। চাকরি দেয়ার নাম করে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে জন প্রতি ৮-১০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। অথচ পৌর সভার বর্তমান আয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
এছাড়া ধর্মীয় কাজের কথা বলে সপ্তাহে ৪ দিন ছুটি ভোগ করছেন এবং একদিন অফিস দেখিয়ে ৬-৭ হাজার টাকা টিএ/ডিএ নিচ্ছেন মেয়র রিন্টু। ইতঃপূর্বে মেয়র কয়েকটি পদে জাল ও ভুয়া সনদে চাকরি দিয়েছেন। যা নিয়ে এখনও পর্যন্ত খুলনা বিভাগীয় কমিশনার অফিসে মামলা চলমান আছে। ঠিকাদার কর্তৃক জমাকৃত হাট-বাজার ইজারার সিডি/ব্যাংক ড্রাফট পৌর তহবিলে জমা না দিয়ে মেয়র উত্তোলন করেছেন। এছাড়া মাছ বাজার, পান বাজার, কসাই খানা ইজারা না দিয়ে খাস আদায় করে এবং সরকারি ভ্যাট-আয়করের টাকা জমা না দিয়ে সে টাকাও উত্তোলন করে মেয়র রিন্টু আত্মসাৎ করেছেন। নিয়ম নীতি না মেনে এডিপি/উন্নয়ন ফান্ডের টাকা দিয়ে এসি, রুমের পর্দা, ফার্নিচার কেনা হয়েছে।
এছাড়া এডিপি/উন্নয়ন ফান্ডের টাকা টেন্ডার না দিয়ে ওই টাকা কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করেছেন। পৌর তহবিলের টাকা তছরুপ করার কারণে পৌর কর্মচারীদের বেতন, বোনাস, ভাতা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এডিপির টাকা লুটপাটের যেন মহোৎসব চলছে হরিণাকুণ্ডু পৌরসভায়। রোলার ড্রাইভারের পদ না থাকলেও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ পৌরসভায় যোগদান করিয়েছেন। গার্ভেজ ট্রাক ভাড়ায় চালিয়ে মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা শাকের আলীকে মাসের পর মাস সম্মানী ভাতা বন্ধ রেখেছেন এবং ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শুভংকর বিশ্বাসকে সম্মানী ভাতা বন্ধের হুমকি দেয়া হয়েছে। যেখানে কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা হয় না সেখানে আবার নতুন করে ৭ জন জনবল নিয়োগ দেয়ার পায়তারা করে কিভাবে এ অভিযোগ কাউন্সিলরদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনিয়ম-দুর্নীতি করে নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন এই আলোচিত মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টু। কোনো নিয়ম নীতির তিনি তোয়াক্কা করেন না। অবৈধ অর্থের বিনিময়ে সমস্থ অনিয়মই তার কাছে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পৌরসভার সচিব সন্তোষ কুমার হাজরা জানান, পৌরসভার নিয়োগের কোনো ছাড়পত্র আনতে সচিবের প্রত্যয়ন লাগে। কিন্তু সচিবালয়ে যে প্রত্যয়ন জমা দিয়ে মেয়র সাহেব ৭টি নিয়োগের ছাড়পত্র এনেছে সেখানে আমি কোনো স্বাক্ষর করিনি। সম্পূর্ণ অগোচরে তার (সচিবের) স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগের ছাড়পত্র আনা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ সব বিষয়ে হরিণাকুণ্ডু পৌর মেয়র শাহিনুর রহমান রিন্টর কাছে জানতে মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ স্থানীয় সরকারের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌরসভায় অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।