হরিণাকুণ্ডুতে অফিস সহকারী মুকুলের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ : তদন্ত কমিটি গঠন

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মুকুল মিয়ার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিস্তর অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতারের সহকারী পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন)  জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

প্রথম তদন্ত সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ না হওয়ায় অধিকতর তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ কে.সি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. বিএম রেজাউল করিমকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত করে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেন মাউশি অধিদফতর। প্রথম দফা তদন্ত কমিটির কাছে মুকুলের পক্ষে সাফাই করেন তার পক্ষীয় কয়েকজন শিক্ষক। সব ঘটনা আড়াল করে রিপোর্ট পক্ষে নিতে মুকুল ইতোমধ্যেই তার পছন্দের শিক্ষকদের দারস্থ হয়েছেন। তবে মুকুল মিয়ার শাস্তিমূলক বদলিসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান মাউশির সহকারী পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) জাকির হোসেন। হরিণাকুণ্ডুর অসহায় শিক্ষক সমাজ দুর্নীতিবাজ এই কর্মচারীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়লেও হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা দফতরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে মুকুল এক যুগেরও আগে যোগদানের সময় থেকেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে একাধিকবার আলোচনার কেন্দ্রবৃন্দুতে উঠে আসে। স্কুলে নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষকদের বেতন করণের কাগজ ছাড়করণ, টাইম স্কেল, বিএড স্কেল, শিক্ষার্থীদের নাম উপবৃত্তিতে অন্তর্ভুক্তিকরণ, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠন, ভবন নির্মাণ, স্যানিটেশন সুবিধা, শিক্ষক প্রশিক্ষণে প্রেরণসহ শিক্ষা দফতরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ সম্পাদন করার সুযোগ নেই দুর্নীতিবাজ ওই কর্মচারী মুকুলের দাপটে।

উপবৃত্তি থেকে বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের নাম অন্তভুক্তি করতে মুকুল হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক লাখ টাকা। সম্প্রতি কেবি একাডেমি, শিতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে বেকডেটে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। বিধি বহির্ভূত এসব নিয়োগ প্রক্রিয়ার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে বাছাই, নিয়োগ বোর্ড, এমপিও’র জন্য পেপারস প্রেরণসহ নিরাপদে বেতন উত্তোলন করার সকল দায়িত্ব মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে শিক্ষা অফিসের এই দুর্নীতবাজ চক্রটি সম্পন্ন করার ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি উপজেলার কেবি একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সভাপতির সম্পূর্ণ অগোচরে তার স্বাক্ষর জাল করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে একজন শিক্ষিকা নিয়োগ দিয়ে তার বেতন উত্তোলনের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ঘুষের বিনিময়ে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিসে হয় না এমন কোনো কাজের নজির নেই। অভিযোগ রয়েছে অনেক সময় রেট ফেলে ঘুষ নিয়ে থাকেন মুকুল।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ৩৯ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১২ মাদরাসার প্রধানরা দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতিবাজ মুকুলের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। বিভিন্ন প্রকল্প কর্তৃক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘুষের টাকায় নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন এই আলোচিত ৩য় শ্রেণির কর্মচারী মুকুল। তিনি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় ঘুষের টাকায় বিশাল আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন। মাঠে জমিও কিনেছেন কয়েক বিঘা। ৩ বছর পরপর সরকারি চাকরিজীবীদের বদলির বিধান থাকলেও ঘুষ, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়ম করার কারণে হরিণাকুণ্ডু ত্যাগ করেন না। এক যুগে অন্তত ৫ থেকে ৬ বার বদলির আদেশপ্রাপ্ত হলেও অজ্ঞাত ক্ষমতার জোরে শেষ পর্যন্ত হরিণাকুণ্ডুতে বসতি হয়ে উঠেছে মুকুল।

প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে হরিণাকুণ্ডুতে চাকরি করার সুবাদে তিনি ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলেছেন। হরিণাকুণ্ডুর সচেতন নাগরিক সমাজের মাঝে মুকুলের খুঁটোর জোর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব বিষয়ে শিক্ষা অফিসের কর্মচারী মুকুল মিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন প্রশিক্ষণে পাঠালে শিক্ষকরা খুশি হয়ে কিছু টাকা দিয়ে থাকেন এটা ঘুষ বলা যাবে না। তবে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।