স্বামী ইয়াছিনের নির্যাতন : লাশ হলো সোনিয়া

নূর ইসলাম ও জহুরা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে দামুড়হুদা থানা পুলিশ

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শিশুসন্তান কোলে নিয়ে তালাক নিয়েছিলেন সোনিয়া (২২)। প্রায় নয় মাস স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে ছুটতে থাকেন তিনি। ছদ্মবেশি নির্যাতক স্বামী ইয়াছিন নির্যাতন না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিন মাস আগে পুনরায় বিয়ে করে সোনিয়াকে ঘরে তোলেন। কথা রাখেনি ইয়াছিন। সে তার স্ত্রীকে আবারও নির্মম নির্যাতন শুরু করে। অবশেষে সোনিয়া খাতুনের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে।

সোনিয়া খাতুন বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। স্বামী দামুড়হুদা কোমরপুরের ইয়াছিনসহ তার পরিবারের এ দাবি করেছে। পক্ষান্তরে সোনিয়ার পিতার বাড়ি জয়রাপুর চৌধুরীপাড়ার নিকটজনেরা বলেছেন, সোনিয়াকে ওর স্বামী ইয়াছিন, শ্বশুর নূর ইসলাম ও শাশুড়ি জহুরা খাতুনসহ পরিবারের সদস্যরা বিষপানে বাধ্য করেছে। পুলিশ অবশ্য প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে শ্বশুর নূর ইসলাম ও শাশুড়ি জহুরা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে। ইয়াছিন আত্মগোপন করেছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার জয়রামপুর চৌধুরীপাড়ার নূর ইসলামের মেয়ে সোনিয়া খাতুনের সাথে আনুমানিক চার বছর আগে একই উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা কোমরপুরের নূর ইসলামের ছেলে ইয়াছিনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই নির্যাতন শুরু করে। সংসারে এক কন্যা সন্তানও আসে। স্বামীর নির্যাতন দিন দিন বাড়তে থাকে। উপায় না পেয়ে সোনিয়া দাম্পত্য বিচ্ছেদ ঘটিয়ে পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেন। বিচ্ছেদের নয় মাস পর গত তিন মাস আগে ইয়াছিন আর নির্যাতন করবে না মর্মে শপথ করে স্ত্রীকে ঘরে নেন। সেই শপথ ভঙ্গ করে ইয়াছিন তার স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করতে থাকে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে সোনিয়া খাতুন বিষপান করেছে বলে প্রতিবেশীদের জানায়। তাকে দামুড়হুদার চিৎলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। বিকেলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার সময় চিৎলাতেই সোনিয়া মারা যায়। লাশ কোথায় নেয়া হবে? এ নিয়ে সোনিয়ার ভাইয়ের সাথে স্বামীপক্ষের লোকজনের টানাহেঁচড়াও হয়। এতে করিমন পড়ে খাদে। চলককে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিতে হয়।

অবশেষে লাশ নেয়া হয় সোনিয়ার পিতার বাড়ি চুয়াডাঙ্গার জয়রামপুর চৌধুরীপাড়ায়। পুলিশ বলেছে, সোনিয়ার পিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোমরপুরের ইয়াছিনের পিতা-মাতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লাশ আজ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নিয়ে ময়নাতদন্ত করানো হবে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইয়াছিন আরো একটি বিয়ে করেছিলো। সেই স্ত্রীও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিতার বাড়ি ফিরে প্রাণরক্ষা পেয়েছে। সোনিয়াও পিতার বাড়িতে ফিরেছিলো ঠিকই, সে আবারও ওই স্বামীর ঘরে ফিরে শেষ পর্যন্ত লাশ হলো।