সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ সম্পর্কে মানুষের যত ভ্রান্ত ধারণা

স্টাফ রিপোর্টার: চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ে জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝকানে এসে পড়ে তখন পৃথিবীর কোনো কোনো জায়গা থেকে সূর্যকে আংশিকভাবে কিংবা সম্পূর্ণরূপে দেখা যায় না, এই ঘটনাকে সূর্যগ্রহণ বলা হয়। মূলত আমাবশ্যার পরে নতুন চাঁদ উঠার সময় এ ঘটনা ঘটে। পৃথিবীতে প্রতি বছর সর্বোচ্চ দুইটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়। একইভাবে পৃথিবী পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়লে চাঁদকে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য মনে হয়, এই ঘটনাকে চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়। বৈজ্ঞানিক নিয়মে ঘটা এই সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে সারাবিশ্বের মানুষের মধ্যেই রয়েছে নানা ভ্রান্তধারণা। এশিয়া থেকে আফ্রিকা, আফ্রিকা থেকে ইউরোপ সব জায়গাতেই এইসব ভ্রান্তধারণা প্রচলিত। ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে অবস্থিত গ্রিফিথ অবজারভেটরি সংস্থার পরিচালক ই সি ক্রুপ সারাবিশ্বের মানুষের এই সব ভ্রান্তধারণা নিয়ে কাজ করেছেন। তার মতে, সারাবিশ্বের মানুষ সূর্যের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন নিয়ম করে সূর্য ওঠে। এই সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের সাথে তাল মিলিয়ে চলে মানুষ। তবে হঠাত করে সূর্যগ্রহণের মতো অনিয়মিত ঘটনা ঘটলে তখন তাকে অস্বাভাবিক আর অপ্রকৃতিস্থ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে মানুষ। অনেকেই এই অস্বাভাবিক ঘটনাকে অমঙ্গলজনক মনে করে, তবে সবাই নয়।

ক্রুপের মতো দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব দ্যা ওয়েস্টার্ন কেপের সাংস্কৃতি বিষয়ক জ্যের্তিবিজ্ঞানী জারিতা হলব্রুকও মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ এটিকে অকল্যাণকর মনে করলেও সবাই তা ভাবে না। কেউ কেউ এটি দুঃসময় হিসেবে মনে করেন। আবার কেউ কেউ মনে করে, এটি প্রকৃতির নিয়ম তাই সম্মান পাওয়ার যোগ্য।

ক্রুপের মতে, অনেক অঞ্চলের মানুষ এই ঘটনাকে ভূত প্রেত কিংবা অশরীরি আত্মার কাণ্ড বলে মনে করেন। ভিয়েতনামের মানুষের বিশ্বাস, দানবাকার একটি ব্যাঙ সূর্য কিংবা চাঁদকে গিলে ফেললে সূর্যগ্রহণ কিংবা চন্দ্রগ্রহণ ঘটে। একইভাবে কানাডার পশ্চিম উপকূলের কুয়াকুইতল আদিবাসীদের বিশ্বাস, স্বর্গের মুখ সূর্য এবং চন্দ্রকে গিলে ফেলার কারণে গ্রহণ হয়। কোরিয়ানরা মনে করে, আগুন কুকুর সূর্য এবং চন্দ্রকে গিলে ফেললে সূর্যগ্রহণ সংঘটিত হয়।

সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে নানা সংস্কৃতির বিশ্বাসের কথা তুলে ধরতে গিয়ে ক্রুপ সনাতন ধর্মের পুরাণের কথাও উল্লেখ করেন। পুরাণ অনুসারে, সমুদ্র মন্থনের সময় রাহু (স্বরভানু) নামক এক অসুর লুকিয়ে দিব্য অমৃতের কয়েক ফোঁটা পান করে। সূর্য ও চন্দ্রদেব স্বরভানুকে চিনতে পেরে মোহিনী অবতাররূপী ভগবান বিষ্ণুকে জানায়। স্বরভানু অমৃত গলধঃকরণের পূর্বেই বিষ্ণু আপন সুদর্শন চক্রের মাধ্যমে রাহুর ধড় থেকে মুণ্ড ছিন্ন করে দেন। অমৃত পানের জন্য মুণ্ডটি অমরত্ব লাভ করে এবং এভাবেই রাহু গ্রহটির উত্পত্তি হয়; বাকী মুণ্ডহীন দেহটির নাম হয় কেতু। সূর্য ও চন্দ্রের প্রতি বিদ্বেষের কারণে বছরের নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাহু এদের গ্রাস করে ফেলে, তখনই গ্রহণ সংঘটিত হয়। কিন্তু এই গ্রহণের পর ঠিকই সূর্য ও চন্দ্র রাহুর কাটা গ্রীবা থেকে বেরিয়ে আসে।