সিলিন্ডার বিস্ফোরণ : কর্মজীবনে প্রবেশ করা হলো না কুয়েটের ৪ শিক্ষার্থীর

স্টাফ রিপোর্টার: একামেডিক শিক্ষা সম্পন্ন করলেও কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারলেন না খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের মেধাবী চার শিক্ষার্থী। কর্মজীবনে প্রবেশের আগেই ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা তাদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে সোনালি ভবিষ্যৎ। গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকার আরএস টাওয়ারের তৃতীয় তলায় ভয়াবহ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে কুয়েটের মেধাবী ছাত্র মো. তৌহিদুল ইসলাম অপু নিহত এবং দীপ্ত সরকার, মো. শাহীন মিয়া ও মো. হাফিজুর রহমান অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। অগ্নিদগ্ধ তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
হতাহত কুয়েটের এ চার ছাত্র একাডেমিক শিক্ষা শেষে বাধ্যতামূলক অ্যাটাচমেন্ট (ইন্টার্নশিপ) করতে ময়মনসিংহের ভালুকায় গিয়েছিলেন। এদিকে, খবর পেয়ে রবিবার সকালে কুয়েটের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. আব্দুল জলিলসহ চারজন শিক্ষক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এছাড়া হতাহতের দেখতে দুপুরে ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত মো. তৌহিদুল ইসলাম অপু বগুড়া জেলার শাহাজাহানপুর উপজেলার মাঝিরা গ্রামের মো. নূরুল ইসলামের ছেলে। এছাড়া আহত দীপ্ত সরকার মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার দিঘল গ্রামের বিমল সরকারের ছেলে, মো. শাহীন মিয়া সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার খাস সাতবাড়িয়া গ্রামের নূরুজ্জামান আকন্দের ছেলে ও মো. হাফিজুর রহমান নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার বান্দিপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে। তাদের সকলের বয়স ২৩ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে।
কুয়েট সূত্র জানায়, মো. তৌহিদুল ইসলাম অপু, দীপ্ত সরকার, মো. শাহীন মিয়া ও মো. হাফিজুর রহমান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২কে-১৩ ব্যাচের ছাত্র। তারা ২০১৩ সালে কুয়েটে ভর্তি হন। পরের বছর ২০১৪ সালে তাদের ক্লাস শুরু হয়। বর্তমানে তারা ছিলেন চতুর্ষ (শেষ) বর্ষের ছাত্র। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সব পরীক্ষা শেষ হয়েছে। বাকি ছিলো শুধু বাধ্যতামূলক অ্যাটাচমেন্ট (ইন্টার্নশিপ) পরীক্ষা। অন্যান্য বিষয়ের পরীক্ষা শেষে হাতে-কলমে শিক্ষা গ্রহণের জন্য গত ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চার সপ্তাহের ইন্টার্নশিপ করতে ময়মনসিংহের ভালুকার একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠানে তাদের পাঠানো হয়। ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানের পার্শ্ববর্তী ছয়তলা ভবনের চারতলায় ভাড়া নিয়ে তারা থাকতেন। শনিবার রাত ১টার দিকে গ্যাস সিলিন্ডার০ বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই তৌহিদুল ইসলাম অপু নিহত হন। আহতদের মধ্যে শাহীনের ৮৩ শতাংশ, হাফিজের ৮০ শতাংশ ও দীপ্তর শরীরের ৫৫ শতাংশ ঝলসে গেছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
প্রফেসর ড. মো. আবদুল জলিল জানান, হতাহত চারজনই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে নিহত অপু ক্লাসে ছিলেন সেকেন্ড। তারা ইন্টার্ন করার পরই গ্র্যাজুয়েশনের সার্টিফিকেট পেতেন। এরপরই তারা কর্মজীবনে প্রবেশ করতেন। কিন্তু তার আগেই তাদের দুর্ঘটনার শিকার হতে হল।
কুয়েটের ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, প্রাথমিকভাবে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে। কুয়েটের ইতিহাসে এতবড় দুর্ঘটনা আগে ঘটেনি। হতাহতরা সবাই কুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী। খবর পেয়েই ঢাকা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধানসহ চারজন শিক্ষককে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।