সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় আজ

স্টফ রিপোর্টার: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপির বিরুদ্ধে একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আজ মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল সোমবার রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করে।

গত ১৪ আগস্ট মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া শেষে রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ রাখে ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষ একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তরে বাধ্য করাসহ ১৭টি অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হাজির করে। সাক্ষীদের দাবি কোনো কোনো ঘটনা তার উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে সংঘটিত হয়েছে। অন্যদিকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে বলেছেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওই সময়ে বাংলাদেশেই ছিলেন না। তিনি সে সময় লেখাপড়ার জন্য পাকিস্তানে ছিলেন। পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সহপাঠী সুপ্রিম কোর্টের বিচারক বিচারপতি শামীম হাসনাইনও প্রধান বিচারপতির কাছে লেখা এক চিঠিতে জানিয়েছিলেন, সালাহউদ্দিন কাদের ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছিলেন। দু পক্ষের এ পরস্পরবিরোধী দাবির মুখে আজ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করবে।

সালাহউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে আনা ২৩ অভিযোগের মধ্যে ১৭টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণের দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম গতকাল বলেন, সালাহউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৭টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে আমাদের দাবি। তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করি।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম বলেন, এটি মিথ্যা মামলা। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ থেকে ১৯৭৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে ছিলেন না। এটা আমরা দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। রাষ্ট্রপক্ষ জেরাকালে সালাহউদ্দিন কাদেরকে প্রশ্ন করেছিলো, তিনি বেনামে ও বেআইনিভাবে ১৯৭৪ সালে দেশে এসেছিলেন। এ প্রশ্নের মাধ্যমে তারা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ১৯৭১ সালে সালাহউদ্দিন কাদের দেশে ছিলেন না। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা নিজেই স্বীকার করেছেন ১৯৭১ সালে সালাহউদ্দিন কাদের বাংলাদেশে ছিলেন এ মর্মে তার কাছে কোনো দলিলপত্র নেই।

ফখরুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী গোপাল জবানবন্দীতে বলেছেন, তিনি সালাহউদ্দিন কাদেরকে দেখেছিলেন। কিন্তু জেরার জবাবে তিনি বলেছেন, ১৩ এপ্রিল ১৯৭১ সাল থেকে ২৮ এপ্রিল ভারত যাওয়ার পথে ২৭ এপ্রিল তিনি একবার মাত্র কুন্ডেশ্বরীতে গিয়েছিলেন। অতএব ১৩ এপ্রিল কুন্ডেশ্বরীতে সালাহউদ্দিন কাদেরকে দেখা একটা মিথ্যা। সাক্ষী রাষ্ট্রপক্ষের শেখানো মতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ধরনের সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে কোনো সাজা হলে তা হবে ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। তিনি বলেন, আইন পরিবর্তন করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সালাহউদ্দিন কাদেরকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমরা আশাকরি, এ মিথ্যা মামলা থেকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বেকসুর খালাস পাবেন।

২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ১৭ নভেম্বর তা আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।