সালাহউদ্দিন কাদেরের রায়ের প্রতিবাদে আজ বিএনপির বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় সর্বাত্মক সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম উত্তর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ এবং রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলা শাখার ডাকে এ হরতাল পালিত হয়।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। বিএনপি বলেছে, এ রায়ে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী সুবিচার পাননি, আমরা এ রায়ে বিস্মিত। এটা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার হীনচক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করা এবং সুপরিকল্পিতভাবে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসে অপচেষ্টার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে আজ বিকেল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। গতকাল বুধবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে দলের এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া প্রমুখ

হরতাল চলাকালে গতকাল দুপুরে নিউ মার্কেট এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও আশকার দীঘিরপাড় এলাকায় পুলিশের সাথে ছাত্রদলের সংঘর্ষ ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও বড় ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে জনমনে আতঙ্ক থাকায় রাস্তায় লোক চলাচল ছিলো স্বাভাবিকের তুলনায় কম। নগরীর রাস্তায় রিকশা ছাড়া অন্য যানবাহনও খুব একটা চলাচল করেনি। অধিকাংশ দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। নাশকতার আশঙ্কায় রেল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখে। নগরী থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি। পুলিশ নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদলের ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করে। তবে পুলিশ ৯ জনকে আটকের কথা স্বীকার করেছে। নগর বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে থেকে ৪ জনকে এবং কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে ৫ জনকে আটক করা হয় বলে পুলিশ জানায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের মিছিল পুলিশের হামলায় ১৫ ছাত্রদল নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

পুলিশ সকাল থেকেই মহানগর বিএনপির কার্যালয় নাসিমন ভবন ঘিরে রাখায় দলের নেতাকর্মীরা সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি। সকালে সভাপতি গাজী সিরাজের নেতৃত্বে মহানগর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা নাসিমন ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় পুলিশ ৪ ছাত্রদল নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। নাসিমন ভবনের সামনে মহানগর মহিলা দলের সমাবেশ করার চেষ্টাও পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে যায়। দুপুর ১২টায় নগরীর আশকার দীঘিরপাড় এলাকায় হরতালের সমর্থনে বের হওয়া ছাত্রদলের মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মো. মুসা, বাবুল হক ও আরেফিন নামে ৩ ছাত্রদল কর্মী আহত হন বলে মহানগর ছাত্রদল সভাপতি গাজী সিরাজ জানিয়েছেন। আহতদের চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্রদলের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে বলে জানান তিনি। বেলা ১টার দিকে নগরীর নিউ মার্কেট পূর্ব গেটের সামনের রাস্তায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সিএমপির সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) মির্জা সায়েম মাহমুদ জানান, বেলা ১টার দিকে সিএনজি ট্যাক্সি আরোহী কয়েক ব্যক্তি নিউ মার্কেট পূর্ব গেটের রাস্তায় একটি ককটেল ফাটিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।

মহানগর ছাত্রদল সভাপতি গাজী সিরাজ দাবি করেন, পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার হওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মহানগর যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম স্বপন, বাকলিয়া থানা ছাত্রদল নেতা কামরুল হাসান তালুকদার, খুলশি থানা ছাত্রদল নেতা আব্দুল হালিম ভুট্টু, কোতোয়ালী থানা ছাত্রদল নেতা শওকত আকবর ও পলিটেকনিক ছাত্রদল নেতা হুমায়ুন ফারুক সজীব।

হরতালের সমর্থনে নগরীর চকবাজার মোড়, বাকলিয়া, অলঙ্কার মোড়সহ কয়েকটি স্থানে সমাবেশ ও মিছিল করেছে মহানগর বিএনপি। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। সমাবেশে তিনি অবিলম্বে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মুক্তি দাবি করেন।

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের মিছিলে পুলিশের হামলায় চবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি নেসারুল ইসলাম নাজমুলসহ কমপক্ষে ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহত অন্যরা হলেন এমদাদ (ইসলামের ইতিহাস), জাহিদ (মার্কেটিং), সাইদ (পরিসংখ্যান), জাহাঙ্গীর (ইসলামের ইতিহাস), ইমাম (মেরিন সায়েন্স), সুমন (পরিসংখ্যান), আরিফ (বোটানি), শামীম (ভূগোল), মনির (পরিসংখ্যান, ইমরান (পরিসংখ্যান), সাব্বির (ইতিহাস), ফয়সাল (পদার্থ বিদ্যা), আবীর (মেরিন সায়েন্স), আল আমীন (লোক প্রশাসন), মীম (লোক প্রশাসন)।                রাঙ্গুনিয়ায় বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরসহ সহিংস ঘটনা ঘটেছে। সড়কগুলোতে কোনো যানবাহন চলেনি। কয়েকটি সড়কে যানবাহনের ওপর পিকেটারদের হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। পোমরা ইউনিয়ন এলাকায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার করাত কলে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পিকেটাররা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের শান্তিরহাটে একটি পিকআপ, বনগ্রামে একটি সিএনজি অটোরিকশা ও বান্দরবান সড়কের কারিগরপাড়ায় ৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। মোহাম্মদপুর এলাকায় ৩টি দোকান ও ৪টি সিএনজি অটোরিকশা, ঘাটচেক এলাকায় তিনটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করেছে। পিকেটাররা এসব যানবাহনের যাত্রীদেরও মারধর করে।

বান্দরবান জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক মো. ওসমান গনির নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা শহরে হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। হরতালের কারণে বান্দরবান শহর ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো যানবাহন। বান্দরবান-রাঙ্গামাটিসহ রুমা, থানছি, রোয়াংছড়ি উপজেলা অভ্যন্তরিণ সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। দোকানপাট এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ ছিলো। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা শহরসহ উপজেলাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিপুল পরিমাণে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

রাঙ্গামাটিতে হরতালের সমর্থনে ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মুক্তির দাবিতে রাঙ্গামাটি শহরে গতকাল খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। গতকাল সকালে রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, বনরূপাসহ বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করতে দেখা গেছে নেতা-কর্মীদের। রাঙ্গামাটি শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার যানবাহন ও লঞ্চ। চট্টগ্রাম বান্দরবান রাঙ্গামাটিতে সর্বাত্মক হরতাল পালন করেছে।