সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে আগামী ৫ বছর বাজেট প্রণয়নের পরিকল্পনা

 

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী পাঁচ বছরে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়ন করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এক্ষেত্রে নাগরিকদের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানো হবে। যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন তাদের নিয়ে আসা হবে করনেটের আওতায়। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা বাড়ানো, কর প্রদান ও আদায়ের পদ্ধতি সহজ করা এবং কর আদায়ের আওতা সম্প্রসারণের দিকে সরকার এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হচ্ছে আগামী জুন মাসে। প্রতি অর্থবছরের বাজেট থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে অর্থ। আর তাই আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে পদ্মা সেতু সারচার্জ আরোপ করা হতে পারে। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকার। যদিও এটি এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বাজেটের আকার এর চেয়ে কম হবে না। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তার অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, আগামী বাজেটের আকার হবে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। যেখানে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা নির্ধারিত আছে। বিদেশি অনুদান প্রত্যাশা করা হয়েছে ৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। এছাড়া বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ২১ হাজার ৬৮ কোটি এবং অভ্যন্তরীন উৎস থেকে ৩৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে অর্থাৎ পুরো বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নের ওপর ভরসা করেই। জানা গেছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ই-টিআইএন নিবন্ধন করা সাত লাখ করদাতাদের মধ্যে নতুন করদাতা রয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার। আর ৫ লাখ ৮০ হাজার পুরোনো করদাতা পুনঃনিবন্ধন করেছেন। যদিও বর্তমানে এ সংখ্যা আরও বেশি। গত ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ৬ লাখ ৮০ হাজার টিআইএনধারী ছিলেন। এখন প্রায় ৩৬ লাখ টিআইএনধারী থাকলেও মাত্র ১৭ লাখের কিছু বেশি সক্রিয় রয়েছেন। এরমধ্যে ৬ লাখ টিআইএনধারী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। সারাদেশে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩ কোটি ব্যবসায়ী থাকলেও তাদের সবাই টিআইএনধারী নন। আগামী বাজেট সামনে রেখে কর প্রদানে সক্ষম প্রতিটি মানুষকে করনেটে নিয়ে আসার লক্ষ্যে এনবিআরের পরিকল্পনা রয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কর প্রদানে সক্ষম ব্যক্তিদের করনেটে নিয়ে আসা গেলে নিজস্ব অর্থায়নেই বাজেট প্রণয়ন করতে পারবে সরকার। এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের ডিরেক্টর জেনারেল মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, চলতি বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি আসছে রাজস্ব আয় থেকে। রাজস্ব আয় আরও বাড়িয়ে আগামীতে পুরো বাজেটের অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব। সে জন্য আয়কর আদায় বাড়াতে হবে। করের বোঝা না বাড়িয়ে আওতা সম্প্রসারণে এনবিআরকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য এনবিআরে পর্যাপ্ত জনবল বাড়ানো এবং প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার প্রয়োজন। সম্পূর্ণ অটোমেশন পদ্ধতিতে কাজ করলে বাংলাদেশে রাজস্ব আদায় বহুগুণ বেড়ে যাবে। ফলে নিজস্ব অর্থায়নেই সম্পূর্ণ বাজেট প্রণয়ন করা অসম্ভব নয়।