সফলভাবে চাকরি শেষে অবসরের পথেমেহেরপুর সোনালী ব্যাংকের অফিসার প্রতিবন্ধী নাসিরউদ্দিন

 

মহাসিন আলী: প্রতিবন্ধী হয়েও থেমে থাকেননি মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ভবেরপাড়া গ্রামের প্রতিবন্ধী নাসিরউদ্দিন। সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে অফিসার পদে সফল চাকরি করে আরমাত্র ২ বছর পর অবসরে যাচ্ছেন তিনি। প্রতিবন্ধী এ মানুষটি যেমন অফিসের কাজে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন ; তেমনি সংসার জীবনেও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন।

মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়া গ্রামের মরহুম পানু শেখের ৪ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বড় নাসিরউদ্দিন। যখন তার বয়স মাত্র ৫ বছর তখন তিনি পোলিও রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসায় তিনি জীবন ফিরে পেলেও হারান পা দুটি। স্কুল যাওয়ার বয়সে পা দুটি হারিয়ে তিনি বন্ধুদের স্কুলে যাওয়া চেয়ে দেখতেন। আগ্রহ থাকায় তখন তাকে স্কুলে যেতে উৎসাহ দেন ভবরপাড়া খ্রিস্টান মিশনের তখনকার ফাদার মারিও, ফাদার মার্তেলো টরগার্তো ও ব্রাদার জোসেফ মার্জেল্লসহ মিশনে কর্মরত সকলে।ওই সময় মা সামছুন্নাহারের কোলে চড়ে ভবরপাড়া খ্রিস্টান মিশনারী স্কুলে যেতেন। পরবর্তীতে সাথী হয় ৩ চাকার (হুইল) রিকসা। তিনি বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান মুজিবনগর) মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন।

১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ভবরপাড়া খ্রিস্টান মিশনের টাইপিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালে এসএসসি পাস করেন এবং ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত কারিতাস বাংলাদেশ মুজিবনগরের ভবরপাড়া শাখায় কর্মরত ছিলেন। ৬টি টাইপিস্ট পদের বিপরীতে তিনি সোনালী ব্যাংক, যশোর প্রধান অফিসে কমপক্ষে ৩ হাজার পরীক্ষার্থীর সাথে প্রতিযোগিতা করেন এবং পরীক্ষায় প্রথম হন। ওই সময় প্রতিবন্ধীর জন্য কোনো কোটা না থাকায় তাকে নিয়োগ দিতে কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ আপত্তি করেন। তবে সোনালী ব্যাংক কুষ্টিয়া আঞ্চলিক অফিসের প্রধান বাদশা মিয়ার একান্ত আগ্রহ ও সহযোগিতার কারণে তিনি নিয়োগ লাভ করেন এবং ১৯৮৩ সালের ২ অক্টোবর কুষ্টিয়া আঞ্চলিক অফিসের টাইপিস্ট হিসেবে কাজে যোগ দেন। মাত্র এক সপ্তাহ পরে তিনি সোনালী ব্যাংক মেহেরপুর প্রধান শাখায় যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে তিনি মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি (প্রাইভেট) পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হন। তিনি ২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের অফিসার হিসেবে প্রমোশন পান। বর্তমানে তিনি মেহেরপুর কোর্ট বিল্ডিং শাখায় কর্মরত আছেন।

সংসার জীবনে তিনি ৩ পুত্র সন্তানের জনক। স্ত্রী সবিতা জানান, তাদের বড় ছেলে কামাল হোসেন সুজন বাংলায় (আনার্স) মাস্টার্স পাস করে বর্তমানে আকিজ কোম্পানিতে চাকরি করছেন। মেজ ছেলে জামালউদ্দিন এসএসসি পাস করে বর্তমানে ব্যবসা করেন। ছোট ছেলে ফারুকউদ্দিন তপন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিঙে অধ্যায়নরত। তিনি আরো বলেন, স্বামী নাসিরউদ্দিন তার বাবা-মা জীবিত থাকা অবস্থায় তাদের সব ধরনের খরচ বহন করতেন। তিনি মেহেরপুর শহরের মল্লিকপাড়ায় ২টি জমি কিনেছেন এবং ২টি স্থানে বাড়ি করেছেন। বর্তমানে একটি বাড়িতে বাস করেন এবং তার অন্য বাড়িটি ভাড়া দেয়া আছে।

২বছর পরে অবসর যাওয়ার পর তার সময় কীভাবে কাটবে জানতে চাইলে নাসিরউদ্দিন বলেন, চাকরি করতে তার সমস্যা হয়নি বিধায় চাকরি শেষে তিনি যেকোনো একটি কাজ জোগাড় করে নেবেন। যাতে সেখান থেকে তার কিছু রোজগার হয়। তিনি আরো বলেন, আমাকে যারা লেখাপড়া করতে ও চাকরি জীবনে সব ধরনের কাজে সহযোগিতা করেছেন আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

মেহেরপুর কোর্ট বিল্ডিং শাখার ব্যবস্থাপক একেএম কাইজার বলেন, চাকরি করতে তার কোনো সমস্যা হয়না এবং প্রতিবন্ধী হলেও নাসিরউদ্দিন সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন। তার সহকর্মীরা বললেন, দীর্ঘ চাকরি জীবনে তার কাজে কোনো অবহেলা দেখিনি। তিনি যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন।