সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ নিয়ে যা বললেন সুষমা

স্টাফ রিপোর্টার: সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক প্রতিবেশী যে দেশের সাথে, সেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ‘চরম কষ্টদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে এক গুচ্ছ প্রশ্নের জবাবে সুষমা এই মন্তব্য করে বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবশ্য বসে নেই। তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিলো। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হঠাৎ বেড়ে যাওয়া আক্রমণ, রামকৃষ্ণ মিশনকে পাঠানো হুমকি-চিঠি, মোদি সরকারের হিন্দুনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুষমা স্বরাজকে প্রশ্ন করা হয়। তিস্তাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার ফলে তিস্তা নিয়ে দেশে অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়ার কাজ এবার শুরু হবে।

বাংলাদেশে হিন্দুসহ অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ভারত বিশেষ উদ্বিগ্ন। অল্প সময়ের মধ্যেই সে দেশের হিন্দুদের ওপর পরপর কয়েকটি আক্রমণের ঘটনা ঘটে গেছে। ঢাকায় ১০০ বছরের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রামকৃষ্ণ মিশনকে হুমকির চিঠি পাঠানো হয়। এই চিঠি পাওয়ার পরেই দিল্লিতে সরকার নড়েচড়ে বসেছে। রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী তার গভীর উদ্বেগের কথা সন্ন্যাসীদের জানান। নির্দেশ যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে। পুলিশও নড়েচড়ে বসে। বাড়ানো হয় মিশনের নিরাপত্তা। ২৪ ঘণ্টা তীক্ষ্ণ নজরদারির ব্যবস্থাও করা হয়।

হিন্দুসহ অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর এই আক্রমণ নিয়েই সুষমাকে একগাদা প্রশ্ন করা হয়। সব প্রশ্নের জবাব একসাথে দেন তিনি। সুষমা বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক প্রতিবেশীদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। স্থলসীমান্ত চুক্তি, পালাটানা থেকে বিদ্যুৎ পাঠানোসহ বিভিন্ন চুক্তির পর সেই সম্পর্ক উত্তরোত্তর ভালো হচ্ছে। কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশনকে হুমকি ও হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা চরম কষ্টদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক। সুষমা বলেন, এসব ঘটনা নিয়ে সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সর্বোচ্চ স্তরে কথা বলছে। এই মন্তব্যের পাশাপাশিই সুষমা স্বরাজ বলেন, স্বস্তির কথা এই যে বাংলাদেশ সরকার বসে নেই। তারা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইতোমধ্যেই তিন হাজারের বেশি সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুষমা বলেন, এর চেয়েও আনন্দের কথা, বাংলাদেশের এক লাখের বেশি ধর্মগুরু (মুফতি, আলেম, ওলামা) সই করে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছেন। প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেছেন, ইসলামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। সুষমা বলেন, কোনো দেশের লক্ষাধিক ধর্মগুরুর এমন আচরণ নজিরবিহীন। এর মধ্য দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের সরকার যেমন এর বিরুদ্ধে, ইসলাম ধর্মগুরুরাও এই জঘন্য আচরণ সমর্থন করছেন না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, তার সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অত্যাচারিত ও দেশত্যাগী হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়ার যে নীতি নিয়েছে, তা বাংলাদেশের দুষ্কৃতকারীদের হিন্দু-বিতাড়নে উৎসাহিত করছে কি না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর দেননি। তবে তিনি জানান, যেসব হিন্দু অত্যাচারিত হয়ে ভারতে চলে এসেছেন, শুধু তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিস্তা প্রসঙ্গে সুষমা জানান, ভারত, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিনজনকেই এ বিষয়ে একমত হতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এতো দিন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। নির্বাচনে জিতে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। আশা করা যায়, ভোট চুকে যাওয়ায় তিস্তা নিয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গের সাথে ভারত সরকারের অভ্যন্তরীণ সমঝোতা হতে দেরি হবে না।