শনিবার পর্যন্ত ৪৯ জন বাংলাদেশি হাজির মৃত্যু হয়েছে

 

স্টাফ রিপোর্টার: এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৮ হাজার ৩৯২ হাজি হজ করেছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার করিম বেপারী (৭২), চট্টগ্রামের আলী আহমেদ (৬০), মুন্সীগঞ্জের আবদুর রাজ্জাক (৭২), টাঙ্গাইলের ফটিক প্রামাণিক (৮১) কুমিল্লার সালেহ আহমেদ (৪৩) ও মো. এছাক (৫৩) মারা গেছেন। এ নিয়ে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৪৯ বাংলাদেশি হাজির মৃত্যু হয়েছে। এদিকে এ প্রতিবেদক মসজিদুল হেরেমে নামাজ পড়তে গেলে হাজীরা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে ভিড় জমান। ভোলা দৌলতখান জয়নাল আবেদীন আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রহিম জানান, শাহরাজপুর হজ কাফেলার জনৈক হাফেজ মামুন তাদের ১০০ জনের কাছ থেকে জনপ্রতি ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করে নেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন ১১ জন কোরআনে হাফেজসহ একাধিক মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম। হাফেজ মামুনসহ এসব হাজীরা সৌদি বিমানে জেদ্দায় পৌঁছেন ৯ অক্টোবর। সেখান থেকে মক্কায় বাসে করে যাওয়ার পথে হাফেজ মামুন পালিয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত মামুন পলাতক রয়েছে। মামুনের অফিসে যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, হাজীদের সঙ্গে চুক্তি ছিল বাড়িভাড়া, খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা মামুন বহন করবেন। কিন্তু মামুন পালিয়ে যাওয়ায় এসব হাজীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ধারকর্জ করে এসব হাজীরা বাড়িভাড়াসহ খাবার-ব্যবস্থা করেছেন। একই রকম অভিযোগ রয়েছে মুন ট্রাভেলসের বিরুদ্ধেও। জানা যায়, মুন ট্রাভেলস ১০০ হাজী নিয়ে আসেন, প্রতিজনের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী বলা হয়েছিল, প্রত্যেক হাজীকে টু-স্টার হোটেলে রাখা হবে। পবিত্র মক্কা থেকে ২০০ মিটার দূরে রাখা হবে। কিন্তু এসবের কোনোটাই না করে এ ১০০ হাজীদের ৫ কিলোমিটার দূরে জমজম পাহাড়ের পেছনে রাখা হয়। ৫০০ ফুট উঁচুতে একটি পাহাড়ে পুরাতন ভবনে রাখা হয় তাদের। যেখানে নেই এসিরুম কিংবা ভালো খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৌদি সরকার হাজীদের সুবির্ধাথে কাবা ঘরের ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন একটি অত্যাধুনিক শহর তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। ওমর পাহাড়ে অত্যাধুনিক শহর তৈরির ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। সৌদি সরকার আশা করছেন আগামী ২০২০ সালের মধ্যে মক্কা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ৩ নম্বর রিং রোড পর্যন্ত অর্থাৎ মুজলেফা, কেদেয়া, নাক্কাসা এবং মুজলেফা রোডের দু’পাশ, ইব্রাহিম খলিল রোডের দু’পাশে যত পুরাতন ভবন রয়েছে তা সব ভেঙে ফেলা হবে। এসব ভবন ভেঙে নতুন অত্যাধুনিক ভবন তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জানা যায়, জমজম টাওয়ার এবং হিলটন শেরাটনের পেছনে প্রায় ৫ হাজার বাড়িঘর হোটেলসহ এবং কয়েকটি পাহাড় ভেঙে সমতল করা হয়েছে। সমতল করা জায়গায় মক্কার সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যে স্টেশন তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। জেদ্দা থেকে মক্কা, মক্কা থেকে জেদ্দা, মদিনা থেকে জেদ্দা, জেদ্দা থেকে মদিনা চলাচল করবে ট্রেন। হাজীদের বাসে উঠে চলাচল করতে গিয়ে কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় তা নিরসনে এ স্টেশন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে জানা যায়, মক্কার পবিত্র কাবাঘরের চারদিকের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সড়ক থাকবে না যান চলাচলেন জন্য। সব সড়ক আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হবে।
এ বছর সৌদি কর্তৃপক্ষ মাত্র ২৫০ রিয়ালে বাস ভাড়ার অর্ধেক টাকায় মিনা থেকে আরাফাত, আরাফাত-মুজালেফা এবং মুজালেফা থেকে মিনা পর্যন্ত ৮ লাখ হাজীদের ট্রেনে বহন করেছেন। আগামীতে ১২ লাখ হাজীকে ট্রেনে করে আনা-নেয়া হবে বলে জানান সংশ্লিস্টরা। জানা যায়, হাজীদের জন্য ব্যবvত ৫০ হাজার অত্যাধুনিক বাসের মধ্যে ৬ হাজার বাস বিভিন্ন ত্র“টির জন্য বাতিল করা হয়। আগামী বছর আরও ২০ হাজার বাস বাতিল করা হবে। এসব বাতিল করে দেয়া বাস ব্যবসায়ীরা কিনতে পারবে বলেও জানা গেছে। বাতিল করা বাস ক্রয়ের জন্য সংশ্লিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করারও পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিস্টরা।
শনিবার বিকালে জেদ্দা থেকে হাজীদের নিয়ে একটি বিমান ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে

এদিকে জানা গেছে,  পবিত্র হজ্ব পালনে গিয়ে মৃত্যুবরনকারী মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের ইদ্রিস আলীকে সৌদি আরবে দাফন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার স্থানিয় সময় বাদ যোহর জানযা শেষে তাকে দাফন করা হয়। জানা গেচে,মেহেরপুর সদর উপজেলা পিরোজপুর ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের ইমান আলী মন্ডলের ছেলে ইদ্রিস আলী পবিত্র হজ্ব ব্রত পালন শেষে শয়তানের উদ্যোশে পাথর নিক্ষেপ করার সময় নিচে পড়ে যান। ওই সময় পদদলিত হয়ে তার মৃত্যু হয় বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। তার পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী সৌদি আরবে দাফন করা হয়।